1. admin@anantabangla.com : admin :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন
অনন্ত বাংলা শিরোনাম :
নালিতাবাড়ীতে নকল স্বর্ণের বারসহ প্রতারক আটক-১ শিক্ষাকে বাদ দিয়ে কোন কিছু সম্ভব নয় : ড. মামুন আহমেদ নোয়াখালীতে ট্রাক্টর চাপায় এক শিশুর মৃত্যু নেত্রকোনায় নৌকার সিল মারা ব্যালট উদ্ধার তিন বছর পর শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে; মেজর (অব.) হাফিজ  ঝিনাইগাতীতে ট্রলি ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১ ও আহত ১ আরাফাত রহমান কোকোর স্মৃতিতে ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত মাদক ব্যবসায়ীর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার ছবি ভাইরাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফসলের সাথে ১১ বিঘা আলু গম সরিষা হালচাষ দিয়ে নষ্ট করলো প্রতিপক্ষ নেত্রকোনায় ইয়াবাসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী সেনাবাহিনীর হাতে আটক

কুষ্টিয়া জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ৫ আগষ্টের পর ১৪ জন খুন

কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৩৬ বার পঠিত
কুষ্টিয়া জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, বিশেষ করে ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর কোন ভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। যদিও সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে একাধিক আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারপরও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখ যোগ্য কোন পরিবর্তন আসেনি এই জেলায়। আইন শৃঙ্খলা অবনতির কারণে ৫ আগস্টের পর থেকে দুই পুলিশ সদস্য সহ প্রাণ দিতে হয়েছে ১৪ জনকে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা। জেলা জুড়ে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই ঘটনা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু এসব বিষয়ে পুলিশের নিস্ক্রীয়তায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
৯ আগস্ট শুক্রবার নিখোঁজের চার দিন পরদুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী গ্রামের একটি পুকুর থেকে আসাদুল (৫০) নামের এক ব্যবসায়ীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৫ আগস্ট থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। নিহত আসাদুল মিরপুর উপজেলার আমবাড়ীয়া ইউনিয়নের মহাম্মদপুর গ্রামের মৃত আফসার আলীর ছেলে। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় পূর্ব শত্রুতার জেরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। ১০ আগষ্ট কুষ্টিয়া সদরের দরবেশপুরের শেকম নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ১৫ আগস্ট বৃৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগের দখলে থাকা আবাসিক হলগুলোর কক্ষ থেকে দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, মদের বোতল, মাদক সেবনের সরঞ্জামসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ইবি’র বিভিন্ন হল থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, ছয়টি বুলেট, একটি গ্রেনেড, দশটি রামদা, আটটি চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল, দুইটি হকি স্টিক, দুইটি হ্যান্ড স্টিক, ছয়টি জিআই পাইপ, ৪৯টি রড, তিনটি লোহার শিক, পটকা বোমা তিন প্যাকেট, ৫০০ গ্রাম ককটেল বারুদ, ২০০ গ্রাম পেট্রল, ৩০০ পিচ মার্বেল, ১৯টি মদের খালি বোতল মদ, দুইটি ফাঁকা ফেনসিডিলের বোতল, নয়টি ইয়াবা স্টিক, পাঁটা গাঁজা সেবনের সামগ্রী বাঁশি ও ১০-১২টি যৌন নিরোধ সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। ১৯ আগস্ট সোমবার রাতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর পদ্মা নদীর রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভাগজোত খেয়াঘাট এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় সাগর হোসেন (২৬) নামের এক রাজমিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধার করে পাবনা নৌ পুলিশ। সাগর হোসেন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পদ্মার চরের লোকনাথপুর গ্রামের মৃত সৌকত মণ্ডলের ছেলে। ২৪ আগস্ট শনিবার: সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামে সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে এবং ইউপি সদস্য মামুন-ইয়াহিয়া গ্রুপের দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক দ্বন্দ্বের কারণে সদর উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মামুনকে (৩৮) কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ঐ ঘটনায় ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ২৪ আগস্ট শনিবার দুপুরে কুষ্টিয়ার আল্লারদর্গা বাজার এলাকায় রজব আলী (২৮) নামের ভ্যানচালকের ঘুষিতে বারু সর্দার (৬০) নামের অপর ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়। ঐ ঘটনায় অভিযুক্ত ভ্যানচালক রজবকে আটক করে পুলিশ। ৩০ আগস্ট শুক্রবার রাতে নিজ এলাকায় পিকনিক করছিল দুটি গ্রুপ। এ সময় তাদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হলে হামলার ঘটনা ঘটলে কলেজছাত্র রাব্বি হোসেন (২০) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
৪ সেপ্টেম্বর বুধবার বেলা ১১টার দিকে দৌলতপুর  সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দখল করে চাঁদাবাজি, চাঁদার টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হয়। আহতরা হলেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর ইকবাল কর্নেল, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রতন, দৌলতপুর কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কৌশিক আহমেদ, ছাত্রদল কর্মী পারভেজ। ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে লালন শাহ হলের ৪১৫ নম্বর কক্ষে সময় সাত-আটজন মিলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক সিনিয়র শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে মারধর করে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মিনহাজুল হক রুমন ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থী এনামুল হক ইমন আইন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ইমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩০৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন। মারধরের কয়েক ঘণ্টা পর রুমনসহ ১৫-১৬ জন শিক্ষার্থী ইমনের কক্ষে যান। পরে তাঁর কক্ষ থেকে বিছানাপত্র নিচে ফেলে দেওয়া হয়।
১৫ সেপ্টেম্বর রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গড়াই নদের রেল সেতুর জয়নাবাদ অংশ থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের (৩৫) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় গোস্বামী দূর্গাপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় থেকে এক অফিস সহায়ক মো. দুলাল আলী (৪৫) কে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে গোস্বামী দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা জাফর এর বিরুদ্ধে। ২৪ সেপ্টেম্বও মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুরে উপজেলার ঈগল চত্বরে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শহিদুল ইসলাম ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রাগীব রউফ চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে খোকসা উপজেলায় জানিপুর ইউনিয়নের শেখপাড়া বিহারীয়া গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মজিবর রহমানের (৪৫) ওপর হামলা চালিয়েছে তাঁকে কুপিয়ে জখম এবং হাত-পা ভেঙে ফেলা হয়। আহত মজিবর রহমান জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে মক্তব থেকে পড়া শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক সড়কের শিমুলিয়া এলাকায় সড়ক পার হওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি মাইক্রোবাস পাঁচ শিশুকে চাপা দিয়ে পাশের পুকুরে পড়ে যায়। মাইক্রোবাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই মিম খাতুন (১২) নামের এক শিশু মারা যায়। দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় বাকি শিশুদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তানজিলা আক্তার (১৪), মারিয়া খাতুন (১১) ও যুথী খাতুন (৯) মারা যায়। মারাত্মক আহত হয় ফাতেমা খাতুন (৯)। ২৯ সেপ্টেম্বও রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চরসাদিপুর ইউনিয়নে রশিদিয়া দরবার শরিফে হামলা ও ভাঙচুরের পর ওই দরবার শরিফে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৩০ সেপ্টেম্বও সোমবার: কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নঈম উদ্দীন সেন্টুকে (৭০) নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি।
১ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কার্টপাড়া এলাকায় একটি চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে রুবেল হোসেন (২২) নামের এক কলেজ ছাত্রকে হত্যা করা হয়। নিহত রুবেল হোসেন কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। ৫ অক্টোবর শনিবার রাত ৮টার দিকে সাদ্দাম হোসেন হলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী আব্দুল হাফিজ মারধর করে শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তিনি দৌড়ে গিয়ে থানায় আশ্রয় নেন। মারধরের শিকার আব্দুল হাফিজ পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ৬ অক্টোবর রোববার: কুষ্টিয়া সরকারি সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন লাঞ্ছিত হয়। বিকেল ৪টার পর মোসলেম উদ্দিন কলেজে গেলে কিছু শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তারা অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় অন্য শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর নতুন অধ্যক্ষকে কলেজ থেকে বের করে দেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষকের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার বেলা ১টা ৩০ মিনিটের দিকে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বেড় কালোয়া গ্রামের পদ্মা নদীতে কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে বালু তোলার সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের সোহরাব আলী শেখের ছেলে হুমায়ন শেখ (২৭) ও সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের পুরাতন কুষ্টিয়ার আনোয়ার হোসেনের ছেলে শিমুল হোসেন (৩৪) নামের দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়। ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাজপাড়া গ্রামের সরকার পাড়া মোড়ে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় বিএনপির অন্তত ছয়জন নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে দুইজন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ও গুলিবিদ্ধ গুরুতর একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ১২ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীর চর এলাকার পদ্মা নদী থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার পাবনা নৌ পুলিশ। ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার ও ১৬ অক্টোবর বুধবার কুষ্টিয়ায় গড়াই নদে আওয়ামী লীগ নেতার ইজারা নেওয়া বালুর ঘাট ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার ঘটনা ঘটে। ঐ ঘটনায় বালু ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ সমাবেশ ও অস্ত্রের মহড়ার ঘটনা ঘটেছিলো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই বালুঘাট থেকে সাময়িকভাবে বালু অপসারণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
২২ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার বাহিরচর ইউনিয়নের দশমাইলের কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে টাকা ছিনতাই করার সময় ইকরাম হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে তাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। আটক ইকরাম হোসেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকার ইকবাল হোসেনের ছেলে। ঘটনার সময় ইকরামের আরও তিন সহযোগী পালিয়ে যায় বলে জানা যায়। ২৩ অক্টোবর বুধবার কুষ্টিয়ায় কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাদ্দাম বাজার এলাকার নাসির উদ্দিন সড়কে বাসিন্দা খন্দকার মাহে আলম (৬০) ছুরি দিয়ে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। ২৬ অক্টোবর শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের নতুন সুতাইল গ্রামে একটি বাড়িতে চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কেদারনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (২৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ২৮ অক্টোবর সোমবার ভোর ৪টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বেড় কালোয়া এলাকার পদ্মা নদীতে এএসআই সদরুল আলম ও এএসআই মুকুল হোসেন দুই পুলিশ সদস্য নিখোঁজ হয়। তবে কি কারণে হামলার ঘটনা ঘটেছে নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। দুই পুলিশ সদস্যকে জীবিত উদ্ধার করতে না পারলেও  ২৯ শে অক্টোবর এবং ৩০ শে অক্টোবর পদ্মা নদী থেকে ঐ দুই পুলিশ সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৮ অক্টোবর সোমবার কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া কুষ্টিয়াগামী আল আমিন পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় শিমুলতলা এলাকা থেকে মালিকবিহীন ২৫ মিলি লিটার বোতলের ৯ বোতল বিষ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবির সদস্যরা। উদ্ধার করা বিষের আনুমানিক বাজার মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা বলে জানানো হয় বিজিবির পক্ষ থেকে। ৩০ অক্টোবর বুধবার বিকেলে পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের সাতারপাড়া গ্রামের রমজান মন্ডলের ছেলে হামিদ (৫০) ও নজরুল ইসলাম মন্ডল (৪৫) দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও মারধর করে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৪০ মিনিটের সময় ভেড়ামারা থানার গ্যারেজ থেকে ৩ পুলিশের তিনটি মোটরসাইকেল চুরি হয়। থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৪০ মিনিটের দিকে ভেড়ামারা থানার ভেতরের গ্যারেজ থেকে তিনটি মোটরসাইকেল চুরি করে চোর চক্রের সদস্যরা।  ১ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের ইনসাফনগর এলাকা থেকে দেশীয় একটি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেন চিলমারী বিওপি বিজিবির সদস্যরা। তবে এ সময় কোনো আসামিকে আটক করতে পারেননি তাঁরা। তবে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই প্রতিদিন কোন কোন চুরি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড ও আইলচারা ইউনিয়নের হঠাৎপাড়া এলাকার স্টিলব্রীজে গত ৫ আগস্টের পর থেকে নূন্যতম ৪ থেকে ৫ বার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ভোড়ামার উপজেলাতে একাধিক স্থানে ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও কুষ্টিয়া পৌর এলকার হাউজিংয়েও প্রতিদিন নানান অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটেই চলেছে। গত সপ্তাহে কুষ্টিয়া মেহেরপুর মহাসড়কে গাছে ফেলে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (২ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৯টার পরে ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম দৌলতপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সংলগ্ন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মানিকদিয়ার লতিফ মোড়ের তার নিজ বাড়িতে ঢুকলে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার কাছে থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুটে নেয়। গত ৩ তারিখ রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পোড়াদহ রেলওয়ে ষ্টেশনে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে তল্লাশী অভিযান চালিয়ে ৫০ এমএল বোতলের ২১ বোতল ভারতীয় এলএসডি যার মুল্য প্রায় ১১ কোটি টাকা এবং ১৯ পিস কম্বল উদ্ধার করে।
এরই ধারাবাহিকতায় দিনে দিনে পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ এবং ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। জেলার একাধিক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, পুলিশকে ফোন দিলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। চুরি এবং ছিনতাই রোধে পুলিশের তেমন কোন ভূমিকা চোখে পড়ছে না। সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ জেলায় সামাজিক দ্বন্দ্ব নিয়ে কিছু হত্যার ঘটনা ঘটেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো অবনতি হয় নাই।
Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত ©২০২৪ দৈনিক অনন্ত বাংলা
Theme Customized BY SHAKIL IT PARK