হাওর বাউরের জেলায় নেত্রকোনায় আমন ক্ষেতে সবুজের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ ধানের গাছ। নেত্রকোনার ৬ উপজেলায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় কৃষকদের মনে বিরাজ করছে হাসি-খুশি ভাব। বুক ভরা আশা করছেন এবার বুঝি লাভবান হবেন। তিন দফা বন্যার পরও কোন জমি পতিত পড়ে নেই। এমনকি চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল পর্যন্ত ভরপুর আমন ধানের মাঠ। গত মৌসুমে আমন ধানের ভাল দাম পাওয়ায় চলতি মৌসুমে ফের আমনেই স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। ধান ক্ষেতের পরিচর্যা শেষে এখন রোগ-বালাই দমনের কাজে ব্যস্ত কৃষক। চারিদিকে যেন শ্যামল সবুজের সমারোহ ঘটেছে। হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এ মুহূর্তে ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। যারা বর্ষার শুরু থেকে আমন ধানের চারা রোপন করেছেন, তাদের জমির ধান গাছ অনেকটা বড় হয়ে গেছে। এখন শেষ মহুর্তে ধানের জমিতে ভালো ফলনের জন্য অনেক কৃষক ইউরিয়া সার ছিটাচ্ছেন। সারের কোনো সংকট না থাকায় মনের সুখে আবাদে আত্ন নিয়োগ করেছেন তারা। আবার অনেকে ধানের পোকামাকড় প্রতিরোধ করতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ ধানের গাছ। আর সেই সাথে দুলছে আমন চাষিদের স্বপ্ন।
বারহাট্টা উপজেলার সাহতা গ্রামের কৃষক জামাল বলেন, তিনি চলতি মৌসুমে উঁচু এক একর জমিতে আমন ধানের চারা লাগিয়েছেন। শেষ মুহুর্তে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অধিক ধান উৎপাদন হবে বলে আশা তার। আমতলা এলাকার কৃষক ডেন্ডু মিয়া বলেন, তিনি চরের নিম্নাঞ্চলে দেড় একর জমিতে ধানের চাষ করেছেন। জমিতে সার এবং ওষুধ প্রয়োগ করেছেন। অধিক ধান উৎপাদনের প্রত্যাশা করেন তিনিও। বিভিন্ন চর ও নিম্নাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, বরাবরের তুলনায় এবার আবাদ মোটামুটি ভালই হয়েছে। পূর্বধলা উপজেলা কৃষি অফিসার জোবায়ের হোসেন বলেন, কৃষকরা যাতে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করে সে জন্য প্রনোদনা প্রদান করা হচ্ছে। সঠিক পদ্ধতিতে একজন চাষি চাষাবাদ করলে তার আশেপাশে যে সকল কৃষক রয়েছে তারা তা দেখে উৎসাহিত হবে। এতে আমনের ফলন আরো বেশি হবে। তিনি আরো বলেন, সঠিক পরার্মশ নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে ধানের ফলন ভালো হয়। তাই মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি সহ উপজেলার সকল উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বৃন্দ। ধানের ফলন বেশি হওয়ার জন্য কৃষকদের সঠিক সময়ে বীজ বপন, সঠিক নিয়মে মানসম্মত ধানের চারা রোপন, নিয়ম অনুযায়ী সার ব্যবহার ও সঠিক পরিচর্যার পরামর্শ প্রদান করা হয়। এছাড়া পোকা দমনে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা দমনের জন্য পরামর্শ প্রদান করি। যাতে কৃষকের চাষাবাদ খরচ কম পড়ে এবং পরিবেশের ক্ষতি না হয়।বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যায় কয়েক হেক্টর জমির আমন ক্ষেতের মাঝে মাঝে নুয়ে পড়েছে। তবে বেশি ক্ষতি হয় নাই। হেক্টর প্রতি ৪ মে.টন থেকে ৪.৩ মে.টন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে আশা করছি ভালোই ফলন হবে।
এদিকে কেন্দুয়ায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আমনের সবুজ সমারোহে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে, যেদিকেই চোখ যায় শুধুই আমনের বিস্তীর্ণ মাঠে সবুজ আর সবুজ। আর এসবুজ ধানের পাতায় দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, যথাসময়ে জমিতে সার, কীটনাশক প্রয়োগসহ উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক দেখভাল করার ফলে আমনের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে কেন্দুয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সর্বমোট ২০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯০হাজার ৫শ মেট্রিকটন। আমনে এবার এই উপজেলার দেড় হাজারেরও অধিক কৃষককে প্রণোদনা স্বরূপ সার ও ধান বীজ দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দুয়া পৌরসদরসহ ১৩টি ইউনিয়নে আমন ধানের মাঠে সবুজের সমারোহ। ধানের প্রতিটি খেতে শীষ উঁকি দিচ্ছে। ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের রাজিবপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল হক কনকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি তিন বিঘা জমিতে এবার আমন চাষ করেছি।পোকা-মাকড়ের আক্রমন ছিল, তবে খুবই কম। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেয় তাহলে গত বছরের চেয়ে এবছর আমনের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।
চিরাং ইউনিয়নের শিক্ষক ও কৃষক এনামুল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বুক ভরা আশা নিয়ে দিনভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি, যদিও এবার পোকা মাকড়ের আক্রমন কম ছিল, আমন ধান গত বছরের চেয়ে এবার ভাল হবে। তবে আশা করা যাচ্ছে যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না আসে তবে এবার আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আরো বেশ কিছু কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ভালোভাবে আমন ফসল ঘরে তুলতে পারলে তাদের সারা বছরের চাহিদা পূরণ হয়। এই অঞ্চলের কৃষকরা বিপুল পরিমান ফসল উৎপাদন করে অত্র অঞ্চলের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করেও এ ধান দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকে। উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন মাঠে যাচ্ছি এবং আমাদের কৃষক ভাইদের কীটনাশক প্রয়োগসহ সকল ধরনের পরামর্শ পদান করে আসছি। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা বলেন, আমন ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষক ভাইদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।কৃষকরা নিয়মিত কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং আমাদের পরামর্শমত ধান চাষ করেছে। তিনি আরো বলেন, রোগ-বালাই পোকামাকড়ের আক্রমণ থাকলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ফলে আমানের বাম্পার ফলনে তেমন কোন বাধা হতে পারবেনা। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে, এতে কৃষকরা অনেকটা লাভবান হবে। এ ব্যাপারে নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নূরুজ্জামান বলেন, বরাবরের তুলনায় এবার জেলায় আমনের ভালো ফলন হয়েছে। শুধু আমনেই নয় আমাদের বোরো ফসলের টার্গেট প্রতি বছরের তুলনায় অনেক বেশি হবে।