নেত্রকোনায় দীর্ঘ ৫ বছর অতিবাহিত হলেও জায়গা নির্ধারণ হয়নি মেডিকেল কলেজের। রহস্যজনক কারণে স্থানের জটিলতায় অনিশ্চিত স্থায়ী ক্যাম্পাস। ফলে কলেজটি রয়েছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সেশন সম্পন্ন হলেও মেডিকেলের রেজিস্টার না হওয়ায় পোষ্ট গ্রেজুয়েশন করতে পারবে না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা, আবাসনসহ নানা সমস্যা বিদ্যমান থাকলেও কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়সহ সুশীল নাগরিকরা।এদিকে মেডিকেলের গুরুত্ব তুলে ধরে দ্রুত সমাধান চাইলেন জেলার সিভিল সার্জনও। জানা গেছে, পশ্চাৎপদ জেলাকে স্বাস্থ্যশিক্ষায় উন্নত করতে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঘোষণা দেন নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজটির। এরপর থেকে জেলা সদর হাসপাতালের বিভিন্ন পরিত্যাক্ত কোয়ার্টার ভবনে শুরু হয় প্রাথমিক কার্যক্রম। একে একে ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কোনো সম্ভবনা না দেখে হতাশ শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ নেত্রকোনাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতি সেশনে ৫০ জনের বিপরীতে ভর্তি শিক্ষার্থীরা আবাসন সংকটে অর্ধেক থাকে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে মেস করে। অন্যদিকে শুধুমাত্র থিওরিক্যাল ক্লাসগুলো চললেও ব্যবহারিক ক্লাস করতে পারছে না তারা। যেখানে অস্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে সেখানেও যেভাবে চলছে রেজিস্ট্রেশন করলে শিক্ষার্থীদের ডাক্তার হওয়াটা অন্ত নিশ্চিত হবে। আবার শুধুমাত্র থিওরিক্যাল পড়াশোনায় কেমন ডাক্তার হবে এটাও ভাবনার বিষয়। মেডিকেল কলেজের রেজিস্টার না থাকায় তাদের পোস্ট গ্রাজুয়েশন না হওয়া নিয়ে শঙ্কায়। এর মাঝে কলেজের অধ্যক্ষ বদল হলেও কলেজের সিএ রেজিস্ট্রারসহ রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম আটকেই রয়েছে রহস্যভাবে। যারা বের হবেন প্রথম বর্ষ ফাইনাল দিয়ে তারা আদৌ ডাক্তার হতে পারবেন কিনা সেটিও শঙ্কায়। কারণ রেজিস্টেশনবিহীন চিকিৎসকের মূল্য নেই। পোষ্ট গ্র্যাজুয়েশন তো করতেই পারবেন না। জানা গেছে, নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের ৫টি সেশনে বর্তমানে ২৩৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫৩ জনই মেয়ে বাকী ৮৫ জন ছেলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকায় স্থান নির্ধারনের কাজ করলেও আবার থেমে যায়। জেলা সদর হাসপাতালটি ৭.১৩ একরের। এটিসহ আশপাশের প্রচুর জায়গা থাকার পরেও কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকায়। স্থানীয়রা মনে করেন ২৫০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম চলমান। এটি চালু হয়ে গেলে যেমন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় কাজে লাগবে তেমনি সার্বক্ষনিক সেবা পাবে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ। এমন নানা ধরনের সুযোগ থাকার পরও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন চক্রান্তে নীরব এমন ইঙ্গিত করেছেন স্থানীয়সহ সুশীল সমাজ। জেলা সুজনের সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল জানান, চক্রান্তে আটকে আছে মেডিকেল কলেজটির কার্যক্রম। অথচ জেলা সদর হাসপাতাল কেন্দ্রিক মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে হয়। জায়গা সহ সব ধরেনর সুযোগ সুবিধা থাকার পরও কেন রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে না এটাই সকলের বোধগম্য হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কোনমতেই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. শ্যামল কুমার পাল। তিনি শুধু বলেন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব ব্যাপারে কিছু বললে উর্ধ্বতনের পারমিশন লাগবে। তবে জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ অনুপম ভট্টাচার্য্য বলেন,কলেজের সুবাদে এলাকার সম্ভাবনা ও নানা সংঙ্কটসহ প্রতিকূলতা তুলে ধরে অচিরেই এর সমস্যা সমাধান করতে আহ্বান রাখেন কতৃপক্ষের দিকেই। তিনি বলেন একটি মেডিকেল কলেজ মানে এলাকার চিকিৎসা সঙ্কট সমাধান। অর্থাৎ সার্বক্ষণিক ইন্টার্নি চিকিৎসক থাকলে কোন রোগীর জন্যই সমস্যা হবে না। রোগীরা সেবা পাবেন ২৪ ঘন্টা। যদিও এখনো সেই সেবা দেয়ার চেষ্টা চলছে। তারপরেও সার্বক্ষণিক সেবার ব্যাতয় ঘটবে না।