চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চকঝগড়ু স্কুল এন্ড কলেজে দুইটি পদের নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে। একই উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামের মাধ্যমে টাকা নিয়ে পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে সবই অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা ।
চলতি বছরের ২০ মে চকঝগড়ু উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে একজন পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তী ধাপগুলো যথাযথ নিয়মে হলেও টাকা দিয়ে চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামের পছন্দের দু’প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা হলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে সাদিরুল ও নিরাপত্তাকর্মী পদে হাবিবুর রহমান।
বিদ্যালয়টিতে নিয়োগ বাণিজ্যের এ অভিযোগ চকঝগড়ুর বাসিন্দাদের মুখে মুখে। তাদের দাবি- বিদ্যালয়ের দুই পদে চাকরির জন্য চেয়ারম্যান তরিকুলকে টাকা দিয়েছিলেন সাদিরুল ও হাবিবুর। তারপরই লোক দেখানো পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলেও ওই দু’জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। টাকা নিয়ে তাদের নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ তাইফুর রহমান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের ।
পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে নিয়োগ প্রার্থী পল্লব ঘোষ বলেন, লিখিত পরীক্ষার পর ভাইভাতে বসে ছিলাম। সবকিছু ঠাকঠাক উত্তর দিয়েছি। যারা ফাঁকা খাতা জমা দেওয়ার পর ভাইভাতে বসে কিছুই পারেননি তারাই চাকরি পেয়েছে। টাকা দিয়ে তারা চাকরি করিয়ে নিয়েছেন।
আরেক নিয়োগ প্রার্থীর বাবা কামিরুল ইসলাম বলেন, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা মাদকাসক্ত। সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ও প্রধান শিক্ষক তাইফুর টাকা নিয়ে তাদের চাকরি দিয়েছেন।
বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ টকি বলেন, নিয়োগকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম দু’জনের থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এই টাকার ভাগ শিক্ষক তাইফুর নিজেও নিয়েছেন। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি এলাকাতেও সবাই অবগত।
এদিকে অনুসন্ধানের একপর্যায়ে নিয়োগ বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট একটি কলরেকর্ড পাওয়া যায়। এতে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তাইফুর রহমানকে নিয়োগ বাণিজ্যের প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা বলা হলে তিনি ‘ইজ্ঞিতে স্বীকার’ করে বিষয়টি এড়িয়ে যান। কলরেকর্ডটিতে তাইফুর রহমানকে বলতে শুনা যায়Ñ ‘নিয়োগের সবকিছুই হয়েছে প্রশাসনের চাপে।’
শিক্ষক তাইফুর রহমান বলেন, নিয়োগকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি। নিয়োগের সব কার্যক্রম ডিসি স্যারের প্রতিনিধি এবং ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশনায় হয়েছে। অভিযুক্ত ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামও একই বক্তব্য দিয়ে দাবি করেন, আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির সভাপতি মোছা. তাছমিনা খাতুন বলেন, আমার দপ্তরে পরীক্ষা নিয়ে যথাযথ নিয়ম মেনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে বাণিজ্য হয়েছে কি-না আমার জানা নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।
প্রশাসনের চাপে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের কোন চাপ দেওয়ার সুযোগ নেই। এটা যদি তিনি (শিক্ষক তাইফুর) বলে থাকেন এটা সম্পন্ন ভিত্তিহীন। বর্তমান যে সময়, এখানে টাকাপয়সা লেনদেনের সুযোগ নেই।