ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে গত ১৫/১৬ বছরের একদিনের জন্যও তাকে রাজপথে দেখা যায়নি। কোনো মিছিল-মিটিং ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করেননি। যেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে শত-শত মামলা হলেও সেখানে তার নামে একটি মামলাও নেই। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছায়াতলে থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করে বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন। দলের দুর্দিনে তাকে দেখা না গেলেও ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে নিজেকে বিএনপি নেতা বলে জাহির করে এলাকায় মহড়া দেওয়া শুরু করেছেন। অলোচিত এই ব্যক্তির নাম শেখ সাদী।
তিনি এশিউর গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। এলাকার মানুষ যাকে ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী হিসাবে চেনে। বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের সদরপুরে। সাবেক এমপি হানিফের খালাতো ভাই পরিচয়ে ২০০৮ সালে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে হাউজিং ব্যবসা করে বিপুল অর্থের মালিক বনে যাওয়া এই শেখ সাদী এখন এমপি হওয়ারও স্বপ্ন দেখছেন। বিএনপির টিকিটে আগামী নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হতে চান। তবে দলে নেই কোনো তার পদ-পদবি। অঢেল টাকার মালিক সাদী এলাকায় দেধারছে টাকা বিলাচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। বিগত সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা ও নির্যাতন করেছে অনেক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী। এখন সেসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়েই তিনি রাজনীতি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। শেখ সাদীর বিষয়ে তার ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মেম্বার ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জেল-জুলুম সহ্য করে আমরা ১৫টি বছর টিকে আছি। উনাকে কখনো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখিনি। স্বৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম ও জেল-জুলুম সহ্য করে যদি রাজনীতির মাঠে থাকতেন তাহলে বুঝতাম ত্যাগী নেতা। এখন দলের সুদিন। এ সময়ে তাকে যদি দলে পুনর্বাসন করা হয় তাহলে কর্মীরা মেনে নেবে না।
কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৫ আগস্টের আগে সাদীকে এলাকার কেউ চিনত না। তিনি ১০ আগষ্ট তারিখে বহিরাগত লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় মহড়া দেন। তিনি বিভিন্ন সভায় নিজেকে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতার ঘনিষ্ঠজন বলেও প্রচার করছেন। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও কুমারখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু বলেন, আমি কয়েক যুগ ধরে বিএনপির রাজনীতি করছি। শেখ সাদীকে কোনোদিন আমি কোনো কর্মসূচিতে দেখিনি। এলাকার কেউ তাকে বিএনপির নেতা হিসাবে চেনে না। তিনি ব্যবসায়ী ও সুবিধাবাদী ব্যক্তি বরং বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে অঢেল সম্পদ কামিয়ে এখন এলাকায় এসে বিএনপি-জামায়াতকে যারা দমন করেছে তাদের নিয়েই রাজনীতি করছেন। এটা দলের জন্য অশনিসংকেত। সুত্র জানায়, দলের সুবিধাবাদী একটি পক্ষ তাকে এলাকায় এনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছে। সেখানে তাকে আগামী দিনের বিএনপির কান্ডারি বলে প্রচার করা হচ্ছে। এতে চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা। কুষ্টিয়ায় বিএনপি দমনের মূল ভূমিকায় থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবউল হানিফের সঙ্গে তার ব্যবসা-বাণিজ্যে আছে বলেও নেতারা জানিয়েছেন। হানিফকে খলঅতো ভাই হিসাবে ব্যবহার করে অর্থ কামিয়ে নিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে শেখ সাদীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করি। এরপর ঢাকায় গিয়ে ব্যবসা শুরু করি। বিএনপির জন্য গত ১৫ বছর ধরে কাজ করে আসছি বলে দাবি করেন। হানিফের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে জানতে চাইলে সাদী বলেন, হানিফ সাহেবের সঙ্গে আমাকে নিয়ে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা একেবারে মিথ্যা। তার সঙ্গে আমার কোনো ব্যবসা নেই। একটি অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে আমার ছবি আছে। দলে আমি কোনো গ্রুপিং চাই না। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে আমি কাজ করব। তিনি আরো বলেন, দলের কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের নির্দেশে আমি মাঠে নেমেছি।