জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে নেত্রকোনার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। প্রতিবছর বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে বসবাস। বৃদ্ধি পেয়েছে লবণাক্ততা। ফলে সংকট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির। প্রতিনিয়ত বিলিন হচ্ছে গাছ-পালা, নষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি, হ্রাস পাচ্ছে কৃষি উৎপাদন, কর্মহীন হয়ে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। বিকল্প কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাড়ি জমাচ্ছে কর্মহীন হাজারও মানুষ। বাঁধ মেরামত করা সহ নানানভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছে অত্র হাওর অঞ্চলের মানুষ। উল্লেখ্য, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছর কোনো না কোনো দুর্যোগ নেত্রকোনা জেলার কোনো না এলাকায় আঘাত হানছে।
ইতোমধ্যে গত ২ বছরের ব্যবধানে ৩টি বড় ধরণের দুর্যোগ আঘাত হেনেছে এলাকায়। এতে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে নেত্রকোনা অঞ্চলের মানুষ। সময়ের ব্যবধানে নাব্যতা হারিয়েছে নেত্রকোনার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নদী। যার মধ্যে মগড়া,কংশ, ধনাইখালি,ধনু,সোমেশ্বরী নদী অন্যতম। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। বেড়েছে লবণাক্ততা, নদীর পানি এবং চিংড়ি চাষ করার ফলে নদীর লবণাক্ততা পানি পোল্ডার অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। এতে নষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি এবং জমির উর্বরতা শক্তি, হ্রাস পাচ্ছে কৃষি ফসল উৎপাদন। সংকট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির।সময় অসময়ে ঘটছে নানান প্রকৃতিক দুর্যোগ।
দূর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বিজয়পুর এলাকার গৃহবধু অঞ্জনা রায় জানান, এলাকার কোথাও কোনো সুপেয় পানির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। পায়ে হেঁটে অনেক দূর থেকে খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হয়। এতে শারীরিক শ্রম যেমন বেশি লাগে, তেমনি সময়ও অপচয় হয় বেশি। ঝড়, অতিবৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি সহ কৃষি ফসল। বিলিন হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের গাছ-পালা। ইতোমধ্যে অত্র অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে অসংখ্য প্রজাতির গাছপালা। নানা দুর্যোগের কারণে পয়োনিষ্কাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার ফলে বাড়ছে বিভিন্ন ধরণের রোগ-বালাই। দুষিত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত এবং মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে যেমন নেওয়া হচ্ছে নানান পদক্ষেপ, তেমনি সচেতনতাবৃদ্ধিতে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষয়ক্ষতি রোধ এবং সহায়তা প্রদান ও সচেনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের মাধ্যমে ২০১৮ সাল থেকে কাজ করছে উন্নয়ন সংস্থা ডরপ পানিই জীবন প্রকল্প। সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও এ অঞ্চলের মানুষের উন্নত জীবন যাপনের জন্য দরকার জিও, এনজিও ও সাধারণ মানুষের সমন্বয়। নিতে হবে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম মিয়া জানান, এই উপজেলাটি একটি হাওর উপজেলা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিনিয়ত যেমন বাড়ছে দুর্যোগ সহ নানা সমস্যা, তেমনি ক্রমশ এলাকায় বসবাসও অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। এলাকার মানুষ প্রতিবছর চলে যাচ্ছে অনত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য নিতে হবে স্থায়ী কর্মপরিকল্পনা। যার মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ,পর্যাপ্ত নিরাপদ পানির উৎস তৈরী, এর প্লাটফর্ম এবং টয়লেটের প্লাটফর্ম উচু এবং উন্নত করা, স্থানীয় সরকার ও সরকারের জলবায়ু মোকাবেলায় অর্থায়ন বাড়ানো,পর্যাপ্ত ড্রেন, কালভার্ট ও সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা সহ অত্র অঞ্চলের পরিবেশ সহনীয় বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন এবং হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে বলে মনে করছে হাওর অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।