সুফল প্রকল্পের আওতায় শেরপুরের গারো পাহাড়জুড়ে তৈরি করা হয়েছে ভেষজ চিকিৎসায় বাসক পাতার বাগান। কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও পরিপক্ব বাসক গাছ থেকে পাতা সংগ্রহের কোনো উদ্যোগ নেই বন বিভাগের। তাই গাছ থেকে ঝরে পড়ছে পাকা পাতা। বাগানে অংশগ্রহণকারীরা জানান, সঠিক সময়ে পাতা সংগ্রহ না করার ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তবে বন বিভাগ জানিয়েছে, খুব দ্রুতই নিলামের মাধ্যমে বাসক পাতা সংগ্রহ শুরু হবে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলাসহ এই তিন উপজেলায় সুফল প্রকল্পের নামে টেকসই বনায়ন জীবিকায়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে সীমান্তবর্তী বালিজুড়ি, রাংটিয়া ও মধুটিলা রেঞ্জে ৬ হাজার ৫৮০ একর জমিতে সুফল বাগান করে বন বিভাগ। এতে দেশীয় বৃক্ষ, ফল, ঔষধিসহ ৬০ প্রজাতির প্রায় ৫০ লাখ গাছ রোপণ করা হয়। এর মধ্যে ২৪৫ হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয় বাসক পাতার গাছ। এরই মধ্যে ভেষজ চিকিৎসায় বাসক পাতার বাগান পাহাড়জুড়ে ছেয়ে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও পরিপক্ব বাসক গাছ থেকে পাতা সংগ্রহের কোনো উদ্যোগ নেই স্থানীয় বন বিভাগের।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সীমান্ত সড়কজুড়ে ছেয়ে গেছে সবুজ পাতার বাগান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটা কোনো চায়ের বাগান। আর কাছে গেলেই বোঝা যায় এটি ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত বাসক বাগান। বর্তমানে গাছগুলো অনেক বড় হয়েছে। গাছে অনেক পাতাও হয়েছে। অনেক জায়গায় আবার দেখা যায়, বাগানের ভেতরে পাকা পাতা পড়ে আছে। অনেক গাছে দেখা যায়, বাসক গাছে পাতা পেকে ঝুলে আছে। স্থানীয় অনেকেই ওই পাকা পাতা সংগ্রহ করছে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য।
বাগানের উপকারভোগী ও স্থানীয়রা জানান, সঠিক সময়ে পাতা সংগ্রহ না করার ফলে পাকা পাতা ঝরে পড়ছে। অথচ বাসক গাছ লাগানোর ছয় মাস থেকে এক বছর পর হলেই পাতা সংগ্রহ শুরু করা যায়। পাতা সংগ্রহ শুরু না হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
বাগানের উপকারভোগী রহিম মিয়া বলেন, ‘সিলেটের যেমন চা-বাগান, আমাদের এদিকে তেমন বাসক বাগান। এই বাসক বাগানে আমরা বেশ কজন সদস্য আছি। এই বাগানের পাতা দিয়ে ওষুধ হবে এটা আমাদের বলা হয়েছে। আমরা সেভাবে দেখা-শোনা ও পরিচর্যা করেছি। বন বিভাগ আমাদের বলেছে খুব দ্রুতই পাতা তুলে বিক্রি করবে এবং আমাদের লাভ হবে। কিন্তু দু-তিন বছর পার হলেও পাতা আর তোলে না। এভাবেই আছে এখনো। যদি পাতাগুলো তুলত, তাহলে আমরা কর্মস্থলে থাকতাম। কিছু টাকা-পয়সা পাইতাম। সংসারটা ভালো চলত।
বাগানের অংশগ্রহকারী প্রদীপ ম্রং বলেন, ‘গারো পাহাড়ে অনেক বাসক পাতার চাষ হয়েছে। আমরা যতটুকু জানি, এগুলো এক বছর পর থেকেই পাতা তোলা যায়। কিন্তু গাছ বড় হয়ে পাতা ঝরে পড়ে যাচ্ছে, পাতা ওঠানোর কোনো খোঁজ নেই। তাই আমি বন বিভাগকে অনুরোধ করব, যাতে দ্রুতই পাতাগুলো তুলে বিক্রি করে।
ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সেন্ট্রাল ভাইস চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা ও শ্রীবরদী শাখার চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, ‘বন বিভাগ যে বাসক গাছের বাগান তৈরি করেছে, তার মধ্যে প্রায় চার বছর পরও পাতা আহরণ শুরু হয়নি। অথচ গাছ এক বছর পর থেকেই আহরণের উপযোগী হয়ে যায়। দ্রুত সময়ে পাতা আহরণ করে ওষুধ কোম্পানির কাছে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করলে স্থানীয়রা শ্রমিক হিসেবে উপকৃত হবেন এবং বাগানে অংশগ্রহণকারী হিসেবে লাভবান হবেন। এ ছাড়া ব্যাপক আকারে চাষ করলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের বালিজুড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘বন অধিদপ্তরের নির্দেশনায় ঔষধি বাগান তৈরি করা হয়েছে এবং গাছগুলোর গ্রোথ সন্তোষজনক। শিগগিরই টেন্ডারের মাধ্যমে বাসকগাছের পাতা বিক্রি শুরু হবে। এটা স্থানীয় জনগণের জন্য লাভজনক হবে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ শরীফ। নির্বাহী সম্পাদক : তাসেরা তাজরীন। বার্তা সম্পাদক : মোহাম্মদ আমান উল্যা।সম্পাদক ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: এমএস প্লাজা (৩য় তলা)২৭/সি/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
তুহিন প্রেস ২১৯/২, ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল হতে মুদ্রিত। ফোন: +৮৮-০২-৪১০৫২৪৯৪, মোবাইল: ০১৯৭১-৮৪২৩৬৫, ০১৭১১৮৪২৩৬৫, বার্তা: ০১৭৩১-৮৫৭১৮৬ ,anantabanglanews24@gmail.com
Copyright © 2024 দৈনিক অনন্ত বাংলা. All rights reserved.