বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ন সার্জিস আলম বলেছেন, শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি, অর্ধ লক্ষ মানুষ রক্ত দেয়নি। রাষ্ট্রব্যবস্থার আমুল পরিবর্তনের জন্য ছাত্র-জনতার এই রক্তাক্ত গণ অভ্যুত্থান। সুতরাং প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। কোন বড় দলই বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্টের একটি চুলও নড়াতে পারেনি। ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও রক্তের বিনিময়ে দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে।
শনিবার (৯ অক্টোবর) সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, আমরা বলছি না রাষ্ট্রের সব কিছু সংস্কার করে নির্বাচনে যান। আমরা এটাও বলছি না আগামী ৫-৬ বছর ধরে সংস্কার করেন। কিন্তু সংস্কারের জন্য ন্যুনতম একটা যৌক্তিক সময় লাগবে। কোনো বিবেকবান মানুষ তার জায়গা থেকে চিন্তা করতে পারবেন না যে এক বছরের মধ্যে সব কিছু সংস্কার হয়ে যাবে। ১৬ বছর ধওে যে সিস্টেম গুলোকে ধীরে-ধীরে ধ্বংস করা হয়েছে, সেই সিস্টেম গুলোকে সংস্কার করতে একটা যৌক্তিক সময় প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছর এমনকি ৫৩ বছরেও বাংলাদেশের সংবিধান পাঁচ বছরের জন্য দেশের মানুষকে একটি জনতার সরকার উপহার দিতে পারেনি। আমাদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে পারেনি। সেই সাংবিধানিক সংস্কারও প্রয়োজন। প্রত্যেক পাঁচ বছরের জন্য বড়-বড় ইশতেহার দিয়ে প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় আসে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরপরই তারা ইশতেহার ভুলে যায়। এটিও ভুলে যায় তারা যে জনতার সরকার।
সারিজস বলেন, শুধু নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি আর এই অভ্যুত্থানও হয়নি। দুর্নীতি গ্রস্ত সিস্টেম গুলোর জন্য এই মানুষ গুলো বিগত ১৬ বছরে বিরক্ত হতে হতে দেয়ালে পিঠ লেগে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ১৬ বছরে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি গ্রস্ত ছিল নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন সংস্কার না করলে কোনো ভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, শুধু একটা নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে না। এর পাশাপাশি অনেক গুলো প্রতিষ্ঠান জড়িত। এর মধ্যে অন্যতম হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে। তা না হলে নির্বাচন দিলে আবার জবরদখলের ঘটনা ঘটতে পারে, ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে। আবার এই নির্বাচন ঘিওে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সে জন্য একটা বিচারিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। তাই বিচার ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি শহীদ পরিবারের তালিকা আমাদের কাছে এসেছে। আপাতত যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিতদের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে গিয়ে শহীদের পরিবারের হাতে অনুদানের চেক তুলে দিচ্ছি। এটা আমাদের দায়িত্ব। যারা বাকি আছেন তাদের কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে। সেগুলো হাতে পেলে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হবে।
এর আগে সকালে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জুলাই শাহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সিলেটের ১৮জন শহীদ পরিবারকে ৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ জানান, সিলেটে সর্বমোট শহিদের সংখ্যা ৩২ জন। আমরা ৩২ জনকেই চেক দেব। কিন্তু ১৮ জনের কাগজপত্র সম্পন্ন হওয়ায় তাদেরকে আজকেই চেক দিতে পেরেছি। বাকি ১২ জনের কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। যারা বাকী আছেন তাদেরকেও শীঘ্রই চেক দেওয়া হবে। আমাদের জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে সবাইকে ৫ লাখ করে টাকা দেওয়া হচ্ছে।