নেত্রকোনায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ও নিলাম ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে গোপনে একটি আধা-পাকা ঘর বিক্রি করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পূর্বধলা উপজেলার হোগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হীরা মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে প্রতিকার দাবি করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার হোগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। অভিযোগ দায়েরের পর উপজেলা মাধ্যমিক অফিস তদন্তকালে হোগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষে কথা বলতে গেলে ও রেজুলেশন করে ৮ম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি ৫০০ টাকা নেওয়ার কথা ব্যক্ত করায় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. খবিরুল আহসান বলেন, ‘স্থানীয় এলাকাবাসীর এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে তদন্তের নির্দেশনা এসেছে। তদন্ত শেষে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।’অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে স্থাপিত হওয়া হোগলা উচ্চ বিদ্যালয়টি ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়। এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে হীরা মিয়া দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম করে আসছেন। তার মধ্যে ২০১৬ সালে নির্মিত ৬০ হাত দৈর্ঘ্যের একটি আধা পাকা ঘর মেয়াদ থাকার পরেও কোন প্রকার টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, নিলাম ও রেজুলেশন ছাড়া এবং উপজেলা প্রশাসনের কাউকে না জানিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। ভেঙে ফেলা ঘরের ঢেউটিন, ইট, রড ও স্টিলের দরজা, জানালা সে নিজের মনগড়া ব্যাক্তির কাছে বিক্রয় করে টাকা হাতিয়ে নেয়। অবৈধভাবে আধা পাকা ঘর ভেঙে বিক্রি করে এখন খোড়া যুক্তি দেখানো হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মূল্যবান মালামাল বিক্রি করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এলাকাবাসী।
অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পুরাতন ঘরের স্থানে নতুন বিল্ডিং তৈরির কাজ চলছে, ভাঙ্গা ঘরের ইট ভাঙিয়ে সুরকি করে মাঠে ফেলে রাখা হয়েছে। গুটিকয়েক দরজা জানালা বিদ্যালয়ের একটি ভাঙ্গা রুমে ফেলে রাখা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর ইউএনও অফিসে অভিযোগ দায়ের পর ৫ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হীরা মিয়া তড়িঘড়ি করে রেজুলেশন খাতায় একাধিক সহকারী শিক্ষকের স্বাক্ষর নেওয়ার কথা জানান সহকারী শিক্ষকগণ। রেজুলেশন দেখতে চাইলে দেখাব, দিব-দিচ্ছি করে সময়ক্ষেপণ করে আর দেখাতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তবে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হীরা মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও হোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকনের উপস্থিতিতে ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন মোতাবেক আধা পাকা ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। দরজা ভেঙে বিদ্যুতিক পাখায় শিক্ষার্থীর মাথা আঘাত প্রাপ্ত হয়। ভবনটির ভিটি মাঠ লেবেল থেকে নিচে থাকায় পানি ঢুকে চার-পাঁচ ইঞ্চি হয়ে থাকায় ভবনটি ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে সরকারি ভাবে অডিটোরিয়ামের হলরুমের জন্য একটি নতুন ভবনের বরাদ্দ আসলে বিদ্যালয়ের কোন জায়গা না থাকায় কমিটির অনুমতি সাপেক্ষে এবং বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পরামর্শে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ঢেউটিন, ইট, রড, স্টিলের দরজা-জানালা বিক্রির অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সবগুলো মালামাল সংরক্ষিত আছে। বিধি অনুসারে স্টাপ কাউন্সিল মিটিং ও নিলাম এবং টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ছাড়া বিদ্যালয়ের ঘর ভাঙা অথবা বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক যে পরামর্শ দিয়েছেন সে অনুযায়ী কাজ করেছি। নেত্রকোনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জুবায়ের ছাঈদ বলেন, ‘গেজেট ঘোষণার পর স্কুলের জমি, ভবন ও মালামাল সবকিছুর মালিক সরকার। সেখানে পরিত্যক্ত ঘর বা অন্য কোনো মালামাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে টেন্ডার ছাড়া বিক্রি করা যাবে না। যদি কোনো শিক্ষক গোপনে স্কুলের মালামাল বিক্রি করে তদন্তে তা প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।