নেত্রকোনা সদর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সাতপাই রেল ক্রসিং এলাকার প্রতিটি রাস্তার অবস্থা খানাখন্দে ভরা। এই এলাকা দিয়ে নেত্রকোনা টু পূর্বধলা উপজেলার প্রধান বাইপাস সড়ক। রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দ পেরিয়ে প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শতশত ছোট বড় যানবাহন ও নেত্রকোনা শহরের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে আসছে। রেল ক্রসিং এলাকার প্রতিটি রাস্তাতে খানাখন্দের কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে, এদিকে পাটপট্টি এলাকার ও একেই চিত্র। পৌর কর্তৃপক্ষের শহরের কোনো রাস্তার দিকে নজর নেই বললেই চলে। শহরের প্রতিটি রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী দুর্ভোগে পড়া মানুষের বিভিন্ন অভিযোগ, সঠিকভাবে কাজ না করার কারণে গাড়ির চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে পৌরসভার প্রতিটি রাস্তা আগের চেয়ে আরও বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। এই বেহাল দশার কারণে শহরের ভিতরে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
প্রতিদিন নেত্রকোনা সরকারি কলেজ, নেত্রকোনা পলিটেকনিকেল স্কুল এন্ড কলেজ, নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পথ দিয়ে স্কুল কলেজে যাওয়া আসা করছেন। শহরের প্রতিটি সড়ক সাধারণ মানুষের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলেও পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোনো সড়ক স্থায়ী সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সরেজমিনে পৌরসভার প্রতিটি সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষজন ও যানবাহন চালকদের সাথে কথা বললে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এক সিএনজি চালক ইমরান হোসেন বলেন, শহরের প্রতিটি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন জেলা শহর থেকে যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করি। শহরের প্রতিটি রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে গর্তের মধ্যে গাড়ির চাকা পড়ে উল্টে যায়। অনেক দিন ধরে শহরের প্রতিটি রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখে আসছি। কিন্ত স্থায়ী ভাবে মেরামতের কোনো বন্দোবস্ত করছেন না পৌরসভা কতৃপক্ষ। শুধু উন্নয়নের নামে হয়েছে মহা লুটপাট। রেল ক্রসিং এলাকার মো. হোসেন আলী বলেন, রেল ক্রসিং এলাকার প্রতিটি রাস্তার সঠিক ভাবে কাজ হচ্ছে না। কিছু দিন আগে রাস্তার খানাখন্দের মধ্যে ইট, বালু ফেলে কিছুটা মেরামত করেছিল। কিন্ত কোনো রাস্তার স্থায়ীভাবে কাজ না করার কারণে, গাড়ি চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে আবার খানাখন্দে ভরে গেছে।
তিনি আরও বলেন, রেল ক্রসিং এলাকা দিয়ে বাইপাস হাইওয়ে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রেল ক্রসিং এলাকার প্রতিটি রাস্তা দিয়ে বড় বড় ট্রাক গাড়ি গুলো যাতায়াত করে। সে কারণে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাই। সাতপাই এলাকার মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, লক্ষ লক্ষ লাখ টাকা ব্যয়ের রাস্তা যদি হয় এই, সেগুলো পানিতে পড়েছে। কোনো কাজেই আসেনি এই টাকা। এই রাস্তা গুলো স্থায়ীভাবে নির্মাণ না করায় এই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। একটি স্কুলের মিনি বাস চালক স্বপন মিয়া জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের অলিগলির কোনো সড়ক আর সড়ক থাকে না। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। পানির নিচে বড় বড় গর্ত হয়ে উঠে ঝুঁকিপূর্ণ। তখন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এইসব রাস্তা দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলাচল করতে হয়। কোনো কোনো সময় শিক্ষার্থী নিয়ে বাস উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলো দ্রুত মেরামত করা না হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
নেত্রকোনা সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুলের বাস বা অন্য যানবাহনে করে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এইসব ভাঙা-চোরা সড়ক দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এছাড়া সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানিতে ভরপুর থাকে। গর্তে বাসের চাকা পড়লে তাদের মনে হয় এই বুঝি বাসটি উল্টে পড়ে গেল। তাই দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস শহরের প্রতিটি রাস্তার অবস্থা একেবারেই নাজুক স্বীকার করে বলেন, শহরের প্রতিটি রাস্তায় স্থায়ীভাবে যে কাজ করা যায় সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সম্প্রতিকালে এই রাস্তা গুলোতে কাজ হয়েছিল তা কোনো কাজেই আসেনি। সে জন্য পরিকল্পনা করেই শহরের প্রতিটি রাস্তার কাজ হাতে নেওয়া হবে। কতদিনের মধ্যে শহরের এইসব রাস্তায় স্থায়ী কাজ করবেন বলে মনে করছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, খুব দ্রুত এইসব রাস্তার কাজ শুরু হবে।