নেত্রকোনার হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ যথাসময়ে শুরু না হওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। এ সময় তারা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করার দাবি জানান। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় জেলা শহরের শহীদ মিনারের সামনে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ কমিটির আয়োজনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়, যাতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোনায়েম খান, এবং সঞ্চালনা করেন জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের উপদেষ্টা প্রবীণ শ্যামলেন্দু পাল, রেজাউল হক চৌধুরী টিপু, সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. অলিউল্লাহ, জেলা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের সভাপতি মো. আশরাফুল ইসলাম, ডা. জসিম উদ্দিন, সাংবাদিক অরবিন্দ ধর, শামীম তালুকদার, হাফিজ উল্লাহ চৌধুরী আলিম, কাজী জুয়েল প্রমুখ।
গত ২০ ডিসেম্বর ঢাকা মেইলে ‘ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরুর সময় শেষ, এখনও গঠন হয়নি পিআইসি, শঙ্কায় কৃষক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটি এ মানববন্ধন আয়োজন করে।নীতিমালা অনুযায়ী, জরিপ, গণশুনানি, প্রকল্প স্থান নির্ধারণ, প্রাক্কলন তৈরি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কাজ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাঁধের কাজ শুরু করে তা আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নেত্রকোনায় ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিআইসি গঠন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। পাউবো ও প্রশাসনের দাবি, হাওর থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় এসব কাজ সময়মতো শেষ করা যায়নি। তবে পাউবো জানায়, শুরু করতে দেরি হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৩৬৫ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমির রোরো ফসল নির্ভর করে। গত বছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১৭৮টি পিআইসি গঠন করা হয়েছিল, তবে এবার পিআইসি গঠন কতটি হবে, তা নিশ্চিত করা যায়নি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এখানকার কৃষকরা শুধুমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। এই ফসলের ওপরই তাদের সারাবছরের খরচ, সন্তানদের পড়াশোনা এবং অন্যান্য ব্যয় নির্ভর করে। বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু এবং শেষ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায়, আগাম বন্যায় হাওরের ফসল তলিয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে জেলা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান বলেন, পিআইসি গঠন শেষ হয়েছে, বর্তমানে যাচাই-বাছাই চলছে। খালিয়াজুরী উপজেলায় দুই-একটি বাঁধে কাজ শুরু হয়েছে, দ্রুত অন্যান্য বাঁধেও কাজ শুরু হবে এবং যথাসময়ে বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হবে বলেও তিনি দাবি করেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।