নেত্রকোনার কলমাকান্দায় চাঁদা না পেয়ে আব্দুর রহিম (৪৯) নামে এক ব্যক্তির ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হামলাকারীরা ওই ব্যক্তির পকেটে থাকা সাড়ে তিন লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। হামলাকারীরা স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুর রহিম বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। আব্দুর রহিম উপজেলার নাজিরপুর বাজারের মৃত হজি আয়নল হকের ছেলে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) কলমাকান্দা থানার ওসি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে গত শনিবার উপজেলার নাজিরপুর বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সেইছাহানী গ্রামের মৃত ইছহাক উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৪০), মো. মিলন মিয়া (৩৭), মো. জুলহাস মিয়া (৪৫), মো. লালন মিয়া (২৫), একই গ্রামের মো. আবুল হোসেন মুন্সী (৫০) ও তাঁর ছেলে মো. কায়সার আহমেদ পাপ্পু (২৫)। এদের মধ্যে মো. নজরুল ইসলাম নাজিরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। গত ১০ আগস্ট দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া আবুল হোসেন মুন্সী নাজিরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য। গত ৫ ডিসেম্বর নৈতিকতা বিরোধী নানা বিতর্কিত কার্যক্রমের জন্য তাক শোকজ করেছে উপজেলা বিএনপি।
ভুক্তভোগী আব্দুর রহিম অভিযোগে জানান, নাজিরপুর মৌজায় আমার ২.৬৩ শতাংশ জমি রয়েছে। বিআরএস রেকর্ডমূলে মালিক হয়ে ওই জমি ভোগ দখল করে আসছি দীর্ঘ বছর ধরে। কিন্তু নজরুল ইসলামসহ অন্যান্যরা নানা জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে জোর করে সেই জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জমির দখলের চেষ্টায় একাধিবার আমাদেরকে মারধর ও নিপীড়ন করে যাচ্ছে। জমি নিয়ে ইতিমধ্যে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। মামলায় তিনবার আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন আদালত। আইনিভাবে জমি পেতে ব্যর্থ হয়ে নজরুলসহ অন্যরা আমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ার তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এরই জেরে গত শনিবার রাত ৯টার দিকে নাজিরপুর বাজারের শহীদ মিনারের সামনে পাকা রাস্তার ওপর নজরুলসহ অন্যন্যরা দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে আমার পথ রোধ করে। এ সময় তারা ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিকে অস্বীকৃতি জানালে তারা কিল ঘুসি মারতে থাকে ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেঠানো শুরু করে। এক পর্যায়ে পকেটে থাকা সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়ে যায়। এসময় আমার চিৎকারে বাজারের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তবে আইনের অশ্রয় নিলে যেকোন সময় হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়।
আব্দুর রহিম বলেন, অভিযুক্তরা সবাই চাঁদবাজি, দখলবাজিসসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত। এদের মধ্যে নজরুল ইসলামকে চাঁদাবাজির জন্য সম্প্রতি দল থেকে বহিস্কার করেছে বিএনপি। একই অভিযোগে আবুল হোসেন মুন্সীকে কয়দিন আগে শোকজ করেছে বিএনপি। এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দাবি জানাই। তবে আবুল হোসেন মুন্সী বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। জমি নিয়ে তাদের সাথে দ্বন্দ্ব আছে এটা সত্য। জমির মামলায় তারা তিনবার ডিক্রি পেয়েছে এটাও সত্য। গত শনিবার মারামারির ঘটনায় বাজারে একটা মিছিল হয়েছে। সেখানে আব্দুর রহিমকে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে একটা আঘাত করেছে আমার ভাতিজা। কারণ আব্দুর রহিম আওয়ামী লীগের দোসর। পরে অবশ্য এ ঘটনায় মাফ চাওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে তারা থানায় অভিযোগ করবে ভাবিনি। বিরোধী একটা চক্র আমাদের পেছনে লেগেছে রাজনৈতিকভাবে আমাদের ক্ষতি করার জন্য।