১৯৮২ সাল থেকে শুরু করে টানা ৪২ বছর ধরে কোরআন শরিফসহ বিভিন্ন বই, ফাইল ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বাঁধাই করেই জীবনযাপন করছেন আব্দুর রহমান বয়াতি। নেত্রকোনা পৌর শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় ভ্রাম্যমাণ টং দোকানে দিনভর বই বাঁধাইয়ের কাজ করেন ৬২ বছর বয়সি এই কারিগর। কালের পরিবর্তনে প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মাধ্যমের দাপট থাকা সত্ত্বেও, এই পেশার প্রতি তার নিষ্ঠা অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেইসঙ্গে তিনি একজন লেখক ও সংগীতশিল্পীও। জীবনে লিখেছেন অসংখ্য পুতি-কবিতা ও গল্প।
জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে স্থানীয়রা প্রিয় ধর্মগ্রন্থসহ নানা পুরোনো বই ফাইল নতুন করে বাঁধাই করতে নিয়ে আসেন তার কাছে। পরে তিনি অত্যন্ত যত্ন ও দক্ষতার সঙ্গে প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করেন। তার হাতে বাঁধাই করা কাজের গুণগতমান এবং সৌন্দর্য প্রশংসিত। যদিও একসময় এই পেশায় ভালো আয় হত, বর্তমানে কাজের পরিমাণ অনেক কমেছে। একদিকে ই-বুক ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ, অন্যদিকে কাগজপত্রের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় তার আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবুও তিনি পুরনো এই পেশা ছাড়েন নি। মোক্তার পাড়া মাঠের কোনায় শেখর সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছাদে ছোট একটি খুপরি ঘরে থাকেন আব্দুর রহমান বয়াতি। সেখানে থেকেই তার সব কাজ চালিয়ে যান। আয়ের ঘাটতি মেটাতে দোতারা তৈরিসহ অন্যান্য কাজ করেন। কিন্তু তার মূল পরিচয় সেই বই বাঁধাশিল্পেই।
স্থানীয় লোকজন তাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। তাদের মতে, বাঁধাইয়ের কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা এবং তার সৃষ্টিশীলতার অবদান সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। নেত্রকোনার এই বই বাঁধাই কারিগর প্রমাণ করেছেন, আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই অর্থবহ হয়ে ওঠে। কোরআন শরিফ বাঁধাইয়ের মত একটি পবিত্র কাজ ধরে রেখে তিনি স্থানীয়দের জন্য হয়ে ওঠেছেন এক আলোকিত প্রতীক।
আব্দুর রহমান বয়াতি জানান, তিনি শুধু একজন বই বাঁধাই কারিগর নন, একজন প্রতিভাবান লেখক ও সঙ্গীতশিল্পী। তার রচিত অসংখ্য কবিতা, পুতি গান, এবং গল্প স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। দোতারা তৈরি ও প্রশিক্ষণে তার দক্ষতা স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জনপ্রিয় করেছে তাকে। সময় পেলে পুতি পাঠসহ সুর তোলেন দোতারায়। ৪২ বছরের দীর্ঘ পথচলা, নানা প্রতিকূলতা ও আয়-রোজগারে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, আব্দুর রহমান বয়াতি তার কাজের প্রতি একনিষ্ঠ। তার জীবন শুধু সংগ্রামের গল্প নয়, এটি এক অনুপ্রেরণা।