প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ১২:২৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ৩:১৭ অপরাহ্ণ
শীত জেঁকে বসার আগেই নেত্রকোনায় বাজারগুলোতে শোভা পাচ্ছে এই মৌসুমের সবজি।বাজার ঘুরে সরবরাহও খারাপ দেখা যায়নি। কিন্তু শীতের সবজি হাতের নাগালে পেয়েও দামের কারণে অনেকেই পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। উল্টো গ্রীষ্মকালীন কিছু সবজির দামও বেড়েছে। রবিবার (২৪ নভেম্বর) মাছুয়া কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, শিমের মতো মৌসুমি সবজির সরবরাহ বাড়লেও সবজির দাম তেমন কমেনি। শিম প্রতি কেজি ১২০ টাকা, আকার ভেদে ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা, মুলা ৬০, শালগম ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছুয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা জামাল হোসেন বলেন,“শীতের সবজি তো মাত্র আসতে শুরু করেছে। সপ্তাহখানেক যেতে দেন। এরপর দাম কমতে শুরু করবে। এবার বন্যায় প্রচুর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এজন্য দাম কিছুটা বেশি। এখন আবার আরেক দফায় চাষ হচ্ছে। সেগুলো বাজারে এলেই দাম কমতে শুরু করবে।
শীতকালীন সবজির সরবরাহে গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম প্রায় স্থিতিশীল থাকলেও কয়েকটির দাম আবার গেল সপ্তাহের তুলনায় কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বাজারে বেগুন প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচুরমুখী কেজি ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি, লাউ আকার-আকৃতি ভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকায় দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, পেঁপে ৩০ টাকা, ধুন্দল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। রেল ক্রসিং কাঁচাবাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, “বাজারে সবজির দাম কমতেছে না। গত সপ্তাহে যেগুলো বিক্রি করেছি, সেসবের কিছু-কিছু কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি করে বিক্রি করতে হইতছে। আমরা পাইকারি বেশি কিনি, তাই বিক্রিও করি বেশি। কেন দাম বাড়তি জানি না।”বাজারে প্রতি হালি লেবু ২০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা কলা ৫০ টাকা, ধনে পাতা কিছুটা কমে ১৫০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, চাল কুমড়া আকৃতিভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার দুটি ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে দুই সপ্তাহ ধরেই চড়তে থাকা পেঁয়াজের দাম গেল সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। বিক্রেতাদের তথ্যানুযায়ী, বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২০ টাকা কমে ১৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, নতুন আদা প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, রসুন কেজিতে ১০ টাকা কমে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, জিরা ৯০০ টাকা, পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।মুদি দোকানি ইসমাইল হোসেন বলেন, “অন্যান্য মশলাপাতির দাম প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের থেকে কমেছে। মূলত পাকিস্তানি পেঁয়াজ আমদানির খবরে কিছুটা দাম কমেছে।”আর, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ১২০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও নাজিরশাইল চাল প্রকারভেদে ৭৫ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
২০০ থেকে ২৫০ গ্রামের ইলিশ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার থেকে ১৩০০ টাকা, আর ১ কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া, আকৃতিভেদে শিং মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুই ২৯০ থেকে ৩৫০ টাকা, মাগুর ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৬৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৯০ থেকে ২২০ টাকা, কই ২১০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব বাজারে ব্রয়লার মুরগি গেল সপ্তাহের মতোই ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ২৯০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ২৩০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকা। গরুর মাংসের কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, গরুর ভুঁড়ি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে এখনও নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি আলুর দাম কমেনি। নতুন আলু ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা, শীলবিলাতি আলু ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ও পুরনো আলু ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। আলুর দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারাও। তারা বলছেন, অন্যান্য বছর এ সময়ে আলুর দাম কমলেও এ বছর সে তুলনায় বাড়তি। সংবাদ কর্মী সানাউল্লাহ শাহ সুমন বলেন, “ভাবলাম শীতের সবজি বাজারে এলে দাম-টাম কমবে। কমে তো নাই, বরং উলটো বেড়েছে কিছু-কিছু, দুই-একটা হয়ত সামান্য কমেছে।“যা বেতন পাই, তাতে চলে না। নতুন আলু পছন্দ। কিন্তু যা দাম! পুরনো আলু কিনলাম ৮০ টাকা করে। বিশ্বাস করেন, বাজার করতে এলে মনে হয় প্রেশার বেড়ে যায়!”আলুর দাম নিয়ে আরেক ক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেনও হতাশ। বেসরকারি এই চাকুরের ভাষ্য, অন্যান্য বছর এ সময়ে আলু ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে থাকত। এ বছর সে তুলনায় দাম বেশি।জাহাঙ্গীর বলেন, “একদিন হয়ত বাজার করতে পারলাম না, দুইটা আলু সিদ্ধ করে ভর্তা করলাম। বা তরকারি, সবজি একটু কম আছে, সঙ্গে দুইটা আলু দিয়া দিলাম। এখন এই জিনিসটাও করা যাবে না। কিছু সবজির দাম বরং আলুর চেয়ে কম।”মাছুয়া বাজারে বাজার করতে আসা গৃহিনী রিনা বেগমও ক্ষোভ ঝাড়লেন আলুর দাম নিয়ে। তিনি বলেন, “আগে বলত বেশি করে আলু খান, ভাতের উপর চাপ কমান। এখন তো চালের চাইতে আলুর দাম বেশি। এখন আলুর উপরই চাপ কমাতে হবে।“মানে, একটা না একটা দরকারি জিনিসের দাম বাড়তি থাকবেই। হয় ডিমের দাম, না হয় কাঁচামরিচ, না হয় আলু। এভাবেই চলছে। আমরা কাটছাঁট করে কোনোরকম টিকে আছি।