প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ১২:৫২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ২১, ২০২৪, ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ
নেত্রকোনায় মগড়া নদীর দুই পাড় দখলের মহোৎসব, এতো নদী নয় যেন ময়লার ভাগাড়
নেত্রকোনা পৌরসভা এলাকায় মগড়া নদীতে এক সময় পুরো যৌবন ছিল। তখন নদীতে উত্তাল ঢেউ ভরা ছিল। নদীতে বয়ে যেতো ছোট-বড় নৌকা ও লঞ্চ। এখন আর সেই অপূর্ব দৃশ্য নেই। এইসব এখন শুধুই স্মৃতি। এখন মগড়া নদী ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরে গেছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে নদী নয় যেন ময়লার ভাগাড়। অথচ ছোটবেলায় এই মগড়া নদীতে অনেকেই সাঁতার কেটেছেন। এখন দখল আর দূষণে আবর্জনার আধার আগাছা,বর্জ্য ও কচুরিপানায় রুদ্ধশ্বাসে নিস্প্রাণ হয়ে উঠেছে নেত্রকোনা শহরের ঐতিহ্যবাহী মগড়া নদী। এক সময় জলতরঙ্গের তালে তালে উল্লাসে মেতে চলা গৌরবোজ্জ্বল এই নদীটি তার যৌবন হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। নদীর পুরো অংশ জুড়ে ময়লা ও বর্জ্য ফেলে পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। দিনদিন ময়লার ভাগারে পরিণীত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই মগড়া নদীটি। দখল,দূষণ আর খননের অভাবে নদীটি হারাতে যাচ্ছে তার চিরাচরিত ঐতিহ্য। বছরে পর বছর উজান থেকে আসা পলি জমে আর স্থানীয় দখলদারদের কারনে নদীটিতে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শুকনো মৌসুমেও নদীটিতে পানি থাকেনা। নদীটিতে উপজেলার হাজার হাজার কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করতো। কিন্তু পানি না থাকায় বেশ বিপাকে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা। বর্তমানে নদীতে জোয়ার ভাটার আগমন নেই তবে ভরা বর্ষায় পানি থাকলেও ময়লা আবর্জনা এবং অপরিকল্পিত ভাবে নির্মান করা নিচু ব্রিজের কারনে কোনো নৌকা বা ট্রলার চলাচল করতে পারেনা। নদীটি খনন না করা আর প্রশাসনের নজরদারির অভাবে দখল দূষণের কারণে ঐতিহ্যবাহী এই নদীটি এখন ময়লা ফেলার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। একের পর এক সরকারের পালাবদল হলেও ঐতিহ্যবাহী মগড়া নদী খনন করে সচল রাখার কোনো উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ের এক শ্রেণির মানুষ নদীতে ময়লা বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে। কচুরিপানায় ভরে যাচ্ছে। কোন প্রকার নিয়মনীতি মানছেনা ওই নদীর পাড়ের মানুষ গুলো। নদীর দুই পাড়ে বিভিন্ন স্থানে দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে নদীর পাড়ের বাসিন্দারা। নদীটির বিভিন্ন স্থানে গতিপথ বন্ধ করে শতশত অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে করে নদী দিয়ে পানি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে নদীটি কৃষকদের তেমন কোন উপকারে আসছেনা বলেও জানান স্থানীয়রা। নদীটি দখল মুক্ত করে খনন করে সচলের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহলের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। মাছ শিকার করে জীবন নির্বাহ করতেন। আজ কি হয়ে গেছে, এখন নদীটির দিকে তাকালেও বড্ড কষ্ট লাগে। এক সময় কি ছিল আর এখন কি, কালের আবর্তে দখলে-দূষণে মগড়া নদী আজ মৃতপ্রায়। নেত্রকোনা পৌরসভার কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই ঐতিহ্যবাহী মগড়া নদী নিয়ে। তারা এই প্রতিনিধিকে বলেন, আগে তো নদীতে দলবল নিয়ে বড়-বড় আইড়, বাইম মাছ ধরতাম আমরা। নদীতে নৌকা বোঝাই করে ধান ও পাট নিয়ে বিক্রি করতাম হাট-বাজারে। আর এখন এই নদী খনন ও দখলের কারণে মরার পথে। শুধু এই পৌরবাসীরাই নন, মগড়া নদীর মরণদশা নিয়ে এমন আক্ষেপ নদীর দুই পাড়ের অনেক মানুষের মুখেই শোনা গেছে। ছোট বাজার এলাকার এক বাসিন্দা এই প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা অপারক হয়ে মগড়া নদীর পানি ব্যবহার করি। গোসলের পর শরীর চুলকায়। পোলাপানের অসুখ-বিসুখও ছাড়ে না। শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আছিম উদ্দিন এই প্রতিনিধিকে বলেন, অনেক বাসা-বাড়ির পায়খানার পাইপ লাগানো এই মগড়া নদীতে। পানি মুখে লওয়া তো দূরের কথা। কাছে গেলেই দুর্গগ্ধে আমাদের বমি আসে।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, খাল-বিল ও হাওরবেষ্টিত নেত্রকোনার একটি অন্যতম নদীর নাম মগড়া। এই নদীটি নেত্রকোনা পৌরসভা পেঁচিয়ে রয়েছে। এক সময় এ নদীর উত্তাল তরঙ্গ ভরা যৌবন ছিল। নদীর বুক চিরে চলতো পাল তোলা নৌকা। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল নেত্রকোনা শহর। প্রসার ঘটেছিল জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য ও সভ্যতা। নৌকায় লোকজন যাতায়াতসহ কৃষকের উৎপাদিত পণ্যও বিক্রির জন্য বড় মোকামে নিয়ে যেতো এই নদী পথে। দুই পাড়ের বাসিন্দাদের গোসল, গৃহস্থালির কাজ চলতো এই নদীর পানি দিয়ে। এখন দখলে-দূষণে মগড়া আজ মৃতপ্রায়। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নেত্রকোনা শহরের বুক ছিঁড়ে দক্ষিণ-পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত এই নদীটি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরে অবৈধভাবে দখল করা জায়গায় গড়ে উঠছে বাসা-বাড়িসহ নানা স্থাপনা। মোক্তারপাড়া, ছোট বাজার,নাগড়া এলাকায় বাসা-বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশনের শতাধিক পাইপ নদীতে দেওয়া। ময়লা আর কচুরিপনায় ভরা নদী। মালনী ইসলামপুর এলাকায় নদীর তলায় জমে থাকা পানি ময়লা আবর্জনায় নীল হয়ে গেছে। দূষণ আর দখলের কারণে নদীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। তবে, আশার কথা হলো নেত্রকোনা শহর অংশে নদীর সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য একটি প্রাক্কলন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড নেত্রকোনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সারওয়ার জাহান এই প্রতিনিধিকে বলেন, মগড়া নদী খননের জন্য একটি প্রাক্কলন তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হলেই খনন কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। নদীটি খনন করলে আগের মতো শহরের পরিবেশ আরও সুন্দর হবে বলে তিনি আশাবাদী।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ শরীফ। নির্বাহী সম্পাদক : তাসেরা তাজরীন। বার্তা সম্পাদক : মোহাম্মদ আমান উল্যা।সম্পাদক ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: এমএস প্লাজা (৩য় তলা)২৭/সি/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
তুহিন
প্রেস ২১৯/২, ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল হতে মুদ্রিত। ফোন:
+৮৮-০২-৪১০৫২৪৯৪, মোবাইল: ০১৯৭১-৮৪২৩৬৫, ০১৭১১৮৪২৩৬৫, বার্তা: ০১৭৩১-৮৫৭১৮৬
,anantabanglanews24@gmail.com
Copyright © 2024 দৈনিক অনন্ত বাংলা. All rights reserved.