নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় মগড়া সেতু চালু হওয়ার পর প্রায় ৬ বছর কেটে গেছে। সেতু নির্মাণের সময় দুই পাশে বিকল্প পথ তৈরি করতে নদীতে ইটের চারটি পিলার করা হয়েছিল। এখনো সেগুলো সরানো হয়নি। পিলারগুলোর কারণে নদীর পানি প্রবাহে সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় শহরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পরিবেশ-বাদী সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পিলার চারটি সরানো হয়নি। ঠিকাদারের গাফিলতি এবং সেতুর তদারকির দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জন্য এমনটি হচ্ছে। মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, নদীর দুই পাড় দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছেন। একসময়ের প্রাণচঞ্চল এই মগড়া নদী দখল-দূষণে বিপন্ন। মগড়া সেতুর নিচে ফেলে রাখা মাটি ও ইটের পিলার সরানো হয়নি। সওজ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতে পানি খুব কম। নদীতে শেওলা জমে গেছে। নদীর তীরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আবর্জনা। মূল সেতুর নিচে মাটির স্তূপ।
এক সময়ের প্রাণচঞ্চল এই মগড়া নদী দখল-দূষণে বিপন্ন। মগড়া সেতুর নিচে ফেলে রাখা মাটি ও ইটের পিলার সরানো হয়নি। সওজ বিভাগের নেত্রকোনা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মগড়া সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৭২ দশমিক ৬ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ পায় মেসার্স রিজভী কনস্ট্রাকশন নামের ময়মনসিংহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে সেতুর কাজ শুরু করে একই বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে ঠিকাদার কোনো কাজ না করে শুধু সেতুর দুই পাশে বিকল্প পথ তৈরি করে। কাজ শেষ হওয়ার পর ২০১৮ সালের আগস্টে সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নতুন সেতুটি পুরনোর তুলনা অনেকটা নিচু হয়েছে। ফলে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেতুর দুই পাশে নদীতে বিকল্প পথ তৈরি করতে যে চারটি পিলার দেওয়া হয়েছিল, তা সরানো হয়নি। আবার মাটি, ইট, পাথরসহ যেসব বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছিল, সেগুলোও সব সরানো হচ্ছে না।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জন-উদ্যোগের সদস্য সাইফুল্লাহ এমরান বলেন, পিলারগুলো না সরানো হলে নদীর গতিপথ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। নদীটিতে বর্তমানে পানি নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় এ পিলার চারটির পাশ দিয়ে আবর্জনা ফেলছে লোকজন। পিলারগুলো সরানোর বিষয়ে তাঁরা বিভিন্ন সময় কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু ৬ বছর পরও সেগুলো সরানো হয়নি। এ ছাড়া সেতু নির্মাণের সময় পাশে মাটি জড়ো করা হয়েছিল। সেগুলোও সরানো হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক হোসাইন আহম্মেদ বলেন, এটা অনেক পুরোনো বিষয়। চার বছর আগেই বিলও নেওয়া হয়ে গেছে। এখন নতুন করে এসব বিষয় কেন আসছে? আর সেতু নির্মাণ করতে যে দুটি বিকল্প পথ তৈরি করা হয়েছিল, তার বেশির ভাগ মাটিসহ বিভিন্ন উপাদান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নেত্রকোনা সওজ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আলনূর সালেহীন বলেন, নদী থেকে মাটি ও ইটের পিলারসহ সবকিছু সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলা হবে।