নেত্রকোণা জেলার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। জেলার ৮৬টি ইউনিয়ন,১০ উপজেলা ও ৫টি পৌরসভার বেশিরভাগ মানুষ কৃষির উপর জীবিকা নির্বাহ করেন।এরমধ্যে ধান চাষকেই প্রাধান্য দেন তারা।তবে ধান চাষের পাশাপাশি বাড়তি ফসল উৎপাদনে জেলার স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষকদের উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি শেষ হয়েছে আমন মৌসূম। শুরু হয়েছে বোরো মৌসুম। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বোরো চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। ব্যস্ত রয়েছেন ধানের বীজতলা তৈরিতে।জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফফরপুর ইউনিয়নের কৃষক রাসেল মিল্কি বলেন,তিনি এবার ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এখন বীজতলা তৈরি করছেন। দুদিন পর বীজতলায় বীজ বপন করবেন। পূর্বধলা হোগলা ইউনিয়নের কৃষক আলী হোসেন ও মুকুল মিয়া বলেন, তারা আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শেষ করেছেন। এখন জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো ধান চাষাবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে বীজতলা তৈরির কাজ করছেন।
মাসকা গ্রামের কৃষক বিশ্ব সরকার বলেন, তিনি আমন মৌসুমে উপসহকারী কৃষি অফিসারের পরামর্শে ১ বিঘা জমিতে ব্রি-৮০ জাতের স্বল্পমেয়াদি ধান চাষাবাদ করেছেন। এবার কৃষি প্রণোদনা হিসেবে বোরো বীজ পেয়েছেন। এখন বীজতলা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উপজেলার রাজনগর গ্রামের কৃষক হলুদ মিয়া বলেন, তিনি ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চারার চাহিদা পূরণের জন্য তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে ইতোমধ্যে এক বিঘা জমিতে ব্রি-৭৪ বীজ বপন করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজতলা থেকে ভালো চারা পাওয়ার আশা করছেন তিনি। জেলার বিভিন্ন হাওরের পানি নামতে শুরু করেছে। এতে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ আবাদি জমি। হাওরজুড়ে বোরো ফসল আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা। এখন পুরোদমে চলছে বীজতলা তৈরির কাজ। এতে যেন কৃষকদের দম ফেলার ফুরসত নেই। কৃষক যত আগে ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারবেন,তত আগে মাঠে চারা রোপনের সুযোগ হবে।
হাওর থেকে দেরিতে পানি নামলে বীজতলা তৈরিতে যেমন দেরি হয়, তেমনি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ফসল কর্তনের সময়। সে কারণে বীজতলা তৈরি ও ধানের চারা রোপনে এতটুকু সময় নষ্ট করতে চান না হাওরের কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে যথাসময়েই তৈরি হচ্ছে বীজতলা। অগভীর নদী, হাওর থেকে পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা বৃদ্ধি দিন দিন হাওরাঞ্চলে বোরো ফসল উৎপাদনে নানান বাধা সৃষ্টি করছে। গত কয়েক বছর ধরে ফসল কর্তনের সময় হাওরে আগাম পানি চলে আসা এবং চাষাবাদের সময় হাওর থেকে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বোরো চাষাবাদে নতুন সংকট তৈরি করেছে। মাঘান শিয়ালদার গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, চমৎকার আবহাওয়ায় হাওরে এখন পুরোদমে বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। চারা উপযুক্ত হওয়ার আগে যদি হাওর থেকে পানি না নামে তাহলে ধান রোপন কাজ পিছিয়ে যায়। এবার তা হবে বলে মনে হয় না।