হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের জন্য নীতিমালা অনুযায়ী জরিপ, গণশুনানি, প্রকল্প স্থান নির্ধারণ, প্রাক্কলন তৈরি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাঁধের কাজ শুরু করে তা আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু নেত্রকোনায় এবার ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিআইসি গঠন সম্পন্ন করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় প্রশাসন। ফলে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু এবং শেষ করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। তবে পাউবো ও প্রশাসনের দাবি, হাওর থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় এসব কাজ যথাসময়ে শেষ করা যায়নি। শুরু করতে দেরি হলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে দাবি পাউবোর। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পাউবোর অধীন প্রায় ৩৬৫ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধ আছে। এসব বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমির রোরো ফসল নির্ভর করে। গত বছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য জেলায় ১৭৮টি পিআইসি গঠিত হয়েছিল। এবার কতগুলো পিআইসি গঠন করা হবে, তা এখনো নিশ্চিত করতে পারছে না পাউবো।
জেলার মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদন, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও আটপাড়া উপজেলায় প্রতিবছর হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের আবুল হাসেম বলেন, ‘বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু করা উচিত। ২০১৭ সালের মতো আর কখনো হাওরের ফসলডুবির ঘটনার করুণ দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না। একই উপজেলার বরামতর গ্রামের তানিম খান বলেন, এখানকার কৃষকেরা হাওরের একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। ফসল রক্ষা বাঁধের সব কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু ও শেষ করতে হবে। অন্যথায় আগাম বন্যায় হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যেতে পারে। খালিয়াজুরী উপজেলার লেপসিয়া এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, এবার সময়মতো বাঁধের কাজ শুরু করতে পারেনি। ঠিক সময়ে শেষ করতে পারবে কি না সন্দেহ। আগাম বন্যা হলে ফসলহানি হতে পারে।
মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি, এসি ল্যান্ড) এম এ কাদের রবিবার বলেন, ‘পিআইসি কমিটি গঠন করে ডিসি স্যারের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি অনুমোদন দিলেই কমিটি প্রকাশ করা হবে। তারপর কাজ শুরু হবে।’কলমাকান্দার ইউএনও ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত বলেন, পিআইসি কমিটি গঠন করা শেষ। পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। তাঁর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কমিটি ফাইনাল হওয়ার পর কাজ শুরু হবে। জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান বলেন, এবার হাওর থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় জরিপসহ পিআইসি গঠনে দেরি হচ্ছে। এখনো সব কটি উপজেলায় পিআইসি গঠন করা হয়নি। দ্রুতই পিআইসি গঠন করা সম্পন্ন হবে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে না পারলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, এখনো কয়েকটি উপজেলায় পিআইসি কমিটি গঠন বাকি রয়েছে। এবার হাওর থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় এ বিলম্ব হয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।