বেশ কিছুদিন ধরে টিসিবির পণ্যে পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি মশুরের ডাল পাওয়া গেলেও মিলছে না সয়াবিন তেল। তাই আগ্রহ হারিয়েছেন টিসিবির ক্রেতারাও।তাই টিসিবির ক্রেতা না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন টিসিবির ডিলাররা। সাধারণত টিসিবির পণ্যর জন্য দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ক্রেতাদের। কিন্তু নেত্রকোনায় বেশ কয়েকদিন ধরে টিসিবির পণ্য সূলভ মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেল ভিন্নচিত্র। ক্রেতার অভাবে বিকাল পর্যন্ত বসে থেকেও অর্ধেক পণ্য বেঁচতে পারেনা টিসিবির ডিলাররা। টিসিবির পণ্যের ক্রেতা শূন্য এমন পরিস্থিতির কারণ উঠে আসে বারহাট্টা উপজেলার বেশ কয়েকজন টিসিবির ক্রেতার কথাতেই; তারা বলেন, “ত্যালের জন্যেই টিসিবির পণ্য নেই, ত্যাল নাই, তাই নেই নাই। ত্যাল দিলে আবার নিবার জামু। অর্থাৎ বেশ কিছুদিন ধরে টিসিবির পণ্যে পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি মশুরের ডাল পাওয়া গেলেও মিলছে না সয়াবিন তেল। তাই আগ্রহ হারিয়েছেন ক্রেতারাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবির পণ্য নিয়ে বসে আছেন চেয়ারম্যান, সচিব এবং ডিলারের লোকজন। ১৫-২০ মিনিট পরপর দু-একজন করে আসছেন। তেল নেই জেনে তাদের অনেকেও পণ্য না কিনে ফেরত যাচ্ছেন। বিকাল ৪টা পর্যন্ত বসে থাকার পরও অর্ধেক পণ্য বিক্রি হয় না জানিয়েছেন তারা। পরে আশেপাশের লোকদের ডেকে এনে তা বিতরণ করেন ডিলাররা। বারহাট্টা উপজেলার আসমা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বলেন, “আমাদের ইউনিয়নে অনেক টিসিবির কার্ডধারী। এর আগে দুই লিটার করে তেল দিত। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে লোকজন টিসিবির পণ্য নিত।এবারই টিসিবি তেল দেয়নি। তাই এবার লাইন নেই, গ্রামে গ্রামে খবর দেয়ার পরও লোক খুবই কম এসেছে। দু-দিন পণ্য দেওয়ায় তারপরও লোক কম। পরে আশেপাশের লোকদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা পাশের চিরাম ইউনিয়ন পরিষদেও, সেখানেও ভিড় ছিল না। এদিকে নেত্রকোনা সদর উপজেলার আমতলা ইউনিয়নের বাসিন্দা আজগর আলী জানান, “ত্যাল নাই তাই টিসিবির মাল নিবার যাই না। ত্যালই দরকার। বাজারে অনেক দাম। কালাই চাউল ত্যালের সাথে নেই। বিদেশি কালই, বাজারের সাথে দামে খুব কম-বারা নাই।
তিনি অভিযোগ করেন, “চাউলতো খাওয়া যায় না। ব্যেচা দিই। এখন কেউ কিনেও না।”একই অভিযোগ সিংহের বাংলা ইউনিয়নের বাসিন্দা কল্পনারও। তিনি বলেন, “পাচ কেজি চাল দ্যায় সেডা খায়া যায় না, গন্ধ করে। আগে ত্যালের সাথে চাউল দিলে ব্যেচা থুইয়া আচ্চি। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে বেঁচে যাওয়া চাল-ডাল পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা তাদের নিজস্ব লোকদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ অনেকেরই।মোহনগঞ্জ উপজেলার মাঘান শিয়াধার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “তেল না দেয়ায় টিসিবির পণ্য নিতে খুব কম সংখ্যক লোক এসেছে। পরে বেঁচে যাওয়া মালামাল ভোটার আইডি কার্ড দেখে বিতরণ করা হয়েছে। আসলে তেলের জন্যই টিসিবির পণ্য নিতে আসে লোকজন। চাউলের মানও ভালো না।”শুয়াইর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, “নিজস্ব লোকদের মাঝে বেঁচে দেয়ার ঘটনা সঠিক নয়। পণ্য বিক্রির সময় ছিলাম পরিষদে, তবে আগে কি হয়েছে জানি না। তবে কার্ডধারীর অধিকাংশই আসেনি তেল না থাকায়। পরে আশেপাশের লোকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে টিসিবির নেত্রকোনা অফিসের উপ-পরিচালক বলেন, “তেল সংকট গোটা দেশ জুড়ে আমি কী করব। তবে কিছু উপজেলায় তেলসহ পণ্য দেওয়া হয়েছে। ‘সংকট কি আগামী মাসে কাটবে’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি নীতি-নির্ধারক নই, বলতে পারবো না।” এই বলে ফোন কেটে দিলেন তিনি।