নেত্রকোনায় আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক কৃষাণিরা। ধানের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবং বাজারে দাম থাকায় খুশি তারা। এদিকে, ধান কাটা শেষে আবারও জমি প্রস্তুত করে সেখানে আলু ও সরিষা চাষের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন অনেক কৃষক। ইতোমধ্যে অনেকেই আলু ও সরিষা চাষের জন্য জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করতেও শুরু করেছেন। নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদিত ৩ লাখ ৯০ হাজার ৫২২ মেট্রিক টন চাল বাজারে বিক্রি হয় ১ হাজার ৭২০ কোটি টাকায়।
নেত্রকোনায় বেশ কয়েকটি উপজেলার আমন ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেটে রাখা সোনালি রঙের ধান। ধান কেটে আঁটি বেঁধে সপ্তাহখানেক খোলা মাঠে ফেলে রাখছেন কৃষক। দূর থেকে দেখলে যে কারোরই মনে হবে মাঠে যেন সোনা ছড়িয়ে রয়েছে। পরে কৃষক ধানের সঙ্গে খড় শুকিয়ে তা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। মাঠ থেকে ধান তোলার সঙ্গে আলু ও সরিষা চাষের জন্য জমিতে ফেলা হচ্ছে গোবর সার। চলতি আমন মৌসুমে বর্ষার পানি পর্যাপ্ত ছিল। ধান কাটা-মাড়াইয়ে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে কৃষকের ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। যদি ধানের দাম সরকার বাড়ায় তাহলে লাভের মুখ আরও দেখবেন বলছেন আমন চাষিরা। নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আমি ৮ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। আশানুরূপ ফলন হয়েছে। বর্ষার পানির উপর নির্ভর করে আমন ধান চাষ করা হয়। আমন মৌসুমে বর্ষার পানি পর্যন্ত পাইছি। আল্লাহ দিলে ফলন ভালো হয়েছে।
আশুজিয়া গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, এক বিঘা জমি চাষ করেই আমার সংসার চলে। ছেলে-মেয়ে নেই, দুই জনের সংসার। আমার জমিতে সবচেয়ে ভালো ধান হয়েছে। সামান্য জমি আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে চাষাবাদের কাজ করি। ধান কাটছি, এখন সরিষা চাষ করবো। আশা করি ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাবো। ধান কাটা শ্রমিকরা জানান, ধান কাটার সময় এবার বর্ষা নেই ফলে মাঠেও কোনো পানি নেই। আমাদের ধান কাটতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আমরা ৮ জন এক সঙ্গে ধান কাটছি। ধান কাটা-মাড়াইতে বিঘাপ্রতি ৪০০০ থেকে ৪৫০০ হাজার টাকা নিচ্ছি। দিনে দেড় থেকে দুই বিঘা জমির ধান কাটতে পারছি। নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। নেত্রকোণায় সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় আমনের। জেলায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে।আশা করছি আবহাওয়া ভালো থাকলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সোনালী ফসল ভালো ভাবেই ঘরে তুলতে পারবে। কৃষকদের আগাম লাগানো ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষের পথে।