অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়া ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলি এলাকার আফরোজা ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক আফরোজা মীম বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। মাত্র ২১ দিনের নবজাতক সন্তান রেখে জুয়ায় নিঃস্ব হয়ে জীবন দিলেন তিনি।
এর আগে, ঋণগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) ভোরে পালিয়ে যান তিনি। এর মাত্র ১৫ দিন আগে মীম একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
মধুখালি উপজেলার আড়পারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বদিউজ্জামাল বাবু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে মীম চট্টগ্রামের কোনো এক বন্ধুর বাসায় বিষপানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রোববার (২৭ অক্টোবর) রাতে তার মৃত্যু হয়। সোমবার (২৮ অক্টোবর) বাদ মাগরিব মীমের নিজ বাড়ি মধুখালির আড়পাড়ায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
জানা গেছে, মৃত্যুর আগে মীম তার স্বামী মোহাম্মদ সাব্বিরের ফেসবুক আইডিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেড় ঘণ্টার একটি লাইভ করেন। সেখানে তিনি আত্মহত্যা করবেন সে বিষয়টিও বলেন। তার অনেক টাকা দেনা হয়েছেন সে বিষয়টিও লাইভে উল্লেখ করেন তিনি।
ফেসবুক লাইভে তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে তার নানা চড়াই উতরাই পেরোনোর কথা বলেন। এ সময় তার কাছে কেউ টাকা পাবে না বলে জানিয়ে তিনি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের কারণেই এই পরিণতি বলে জানান।
একসময় মীম তার এক হাতে বিষের বোতল নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ব্যবসাটা বড় হয়ে গেছে দেখে ওদের নজরে পড়ে গেছে। আজ ওরা আমাকে শেষ করে দিয়েছে। যারা আমাকে আমার ভালোবাসার মানুষ থেকে আজ দুরে সরিয়ে দিল। তোরা ওদের কাউকে ছাড়িস না। বেশ কয়েকজনকে তার এই নির্মম পরিণতির জন্য দায়ী করে লাইভ ভিডিওতেই বিষপান করেন তিনি।
শহরের ঝিলটুলী মহল্লার ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন হাসপাতালের সামনে অবস্থিত আফসানা ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক আফসানা মীম। ওই হোস্টেলর ছাত্রী ও বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। এ ঘটনায় ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রায় চার বছর আগে ঝিলটুলীর সুফিয়া বেগমের মালিকানাধীন ১১ তলাবিশিষ্ট রহমত টাওয়ারের ছয়টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আফসানা ছাত্রী হোস্টেল নামে ওই মেসটি চালু করেন মধুখালি উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মামুন মোল্লার মেয়ে আফসানা মীম। সেই ছয়টি ফ্লাটের বিভিন্ন কক্ষে প্রায় ১২০ জন ছাত্রী সদস্য ছিল। একই বিল্ডিংয়ের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্বামী ইমামুজ্জামান মিয়া ওরফে সাব্বিরকে নিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন মীম। পালিয়ে যাওয়ার ১৫ দিন আগে শহরের একটি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।