আগের দিন দুজনই খেলেছেন জাতীয় লিগের ম্যাচ, চট্টগ্রামে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন রাতে, পরদিনই দুজনকেই নামানো হয়েছে টেস্ট ম্যাচ খেলতে।
আগের দিন দুজনই ছিলেন জাতীয় লিগের ম্যাচে। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ছিলেন বিকেএসপিতে, জাকির হাসান সিলেটে। পরদিন দুজনকেই দেখা গেল চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে! আগের রাতে দলে যোগ দিয়ে পরদিনই নেমে গেলেন দুজন। কোচ ফিল সিমন্স দিন শেষে জানালেন, পরিস্থিতির কারণেই এই দুজনকে একাদশে নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
কুমিল্লার মাহিদুল জাতীয় লিগে খেলছেন ঢাকা বিভাগের হয়ে। বিকেএসপিতে রংপুর বিভাগের বিপক্ষে ম্যাচের মাঝ থেকেই তুলে আনা হয়েছে তাকে। টেস্ট দল থেকে যে জরুরি বার্তা গেছে!
চট্টগ্রামে রোববার অনুশীলনে কানকাশনের শিকার হন জাকের আলি। কনকাশনের আগের ইতিহাসও তার আছে। পরদিনও ঠিক ভালো অনুভব করছিলেন না তিনি। মিরপুরে অভিষেক টেস্টে ফিফটি করা ক্রিকেটারকে তাই চট্টগ্রাম টেস্টের বিবেচনার বাইরে রাখা হয়। দ্রুত খবর পাঠিয়ে দলে যোগ করা হয় মাহিদুলকে।
একাদশে অবশ্য তার জায়গা পাওয়ার কথা ছিল না। জাকের আলির জায়গায় সুযোগ পেতেন হয়তো জাকির হাসান।
সেই জাকির ছিলেন সিলেটে, চট্টগ্রামের বিপক্ষে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নিজ বিভাগকে। ম্যাচ শেষে তার টেস্ট দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা আগে থেকেই স্কোয়াডে থাকায়। চার দিনের ম্যাচ শেষ আড়াই দিনেই। জাকিরও তাই ম্যাচ শেষ করে জাতীয় দলে যোগ দিতে রওনা হয়ে যান।
এর মধ্যে জানা যায় লিটন দাসের অসুস্থতার খবর। ম্যাচের আগে সকালেও তার জ্বর ছিল তীব্র। ব্যস, মাহিদুলের অভিষেক ও জাকিরের ফেলার মঞ্চ তৈরি হয়ে যায়।
বাংলাদেশের ১০৬তম টেস্ট ক্রিকেটার মাহিদুল ক্যাপ পান মুমিনুলের কাছ থেকে। তার সুযোগ পাওয়ার প্রেক্ষাপট প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন কোচ সিমন্স।
“সে দলে ঢুকেছে কারণ লিটন ভালো অনুভব করছিল না। এটা প্রথম কারণ। আমাদের একজন উইকেটকিপার লাগতই। (লিটনের জায়গায়) হয়তো জাকের কিপিং করতে পারত, কিন্তু তারও কানকাশন হয়ে গেল।”
“এভাবে দলে আসা আদর্শ কিছু নয় অবশ্যই। মূল স্কোয়াডে থাকতে পারাই সবচেয়ে ভালো। তবে অনেক কিছুই হয়ে থাকে এবং সে সুযোগটা নিয়েছে।”
জাকিরের ব্যাপারটা আরেকটু বেশি কৌতূহল জাগানিয়া। টেস্ট স্কোয়াডে থাকার পরও তাকে জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলতে পাঠানো হয়েছিল। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন তখন বলেছিলেন, চট্টগ্রাম টেস্টে জাকিরের খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। টেস্ট দলে বাইরে বসে থাকার চেয়ে তাকে জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলতে পাঠানো শ্রেয় মনে করেছেন নির্বাচকরা ও টিম ম্যানেজমেন্ট।
সেই জাকির ঠিকই টেস্ট একাদশে ঢুকে গেলেন। জাতীয় লিগের ম্যাচ আড়াই দিনে শেষ না হলে তাকে পাওয়া যেত কি না, এই প্রশ্ন থাকছে।
তাই যোগাযোগের ঘাটতির প্রশ্নও উঠল। সিমন্স অবশ্য সেটি উড়িয়ে দিলেন।
“যোগাযোগের কোনো ঘাটতি ছিল না। জাকিরের ফিরে আসার কথা ছিলই (জাতীয় লিগের ম্যাচ শেষে)। আমরা চেয়েছিলাম যেহেতু সে সবশেষ টেস্টে খেলেনি সে, এই ম্যাচে তাকে প্রয়োজন পড়লে আগে ব্যাটিংয়ে কিছুটা সময় কাটাক। এরপর কনকাশনের ঘটনা ঘটল, অসুস্থতার ব্যাপার হলো। দুজন ব্যাটার ছিটকে গেল। এখানে যোগাযোগের কোনো সমস্যা ছিল না।”
মিরপুর টেস্টে ইনিংস শুরু করা মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম আছেন চট্টগ্রাম টেস্টেও। জাকিরের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে তাই কৌতূহল থাকবে।
টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম দিনটি মাহিদুলের ভালো কাটেনি খুব একটা। সকালেই টনি ডি জর্জির একটি ক্যাচ তিনি নিতে পারেননি হাসান মাহমুদের বলে। পরে তাইজুলের বলে তিনি স্টাম্পিং করতে পারেননি ট্রিস্টান স্টাবসকে। ৬ রানে বেঁচে যাওয়া ডি জর্জি দিন শেষ করেছেন ১৪১ রানে। স্টাবস ২৫ রানে রক্ষা পেয়ে খেলেছেন ১০৬ রানের ইনিংস।
স্রেফ চার বোলার নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ সুবিধা করতে পারেনি ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে। প্রথম দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলেছে ২ ৩ উইকেটে ৩০৭ রান।