প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ৮:০৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ৫, ২০২৪, ৯:২৮ অপরাহ্ণ
কালের বিবর্তনে রোপনের অভাবে নেত্রকোনা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে স্বাদের তেঁতুল গাছ
কবির কবিতায় তেঁতুরের বর্ণনা পাওয়া গেলেও কালের বিবর্তনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ব্যাপক ঔষুধি গুণ সম্পূর্ণ উদ্ভিদ তেঁতুল গাছ। প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষ নানা রোগ নিরাময়ে তেঁতুল(গ্রামীণ ভাষায় আমলকী) থেকে ভেষজ উপায়ে ঔষুধ তৈরীর মাধ্যমে তা সেবন করে সুস্থ্যতা লাভ করে আসছে। এক সময় মানুষ অর্থনৈতিক দৈন্যদশা কারণে অত্যাধুনিক ব্যয়বহুল আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারতো না। ফলে মানুষ গাছ- গাছরা বা কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো। বিভিন্ন বহুমূখী রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী গাছের নাম হলো তেঁতুল গাছ। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ, গাছপালা কাটার মহোৎসব,বন- জঙ্গল কেটে সাবাড় করা ও নতুন করে চারা রোপনের উদ্যোগের অভাবে এই ভেষজ গুণ সম্পূর্ণ উদ্ভিদটি আজ বিলুপ্তির পথে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বাড়ির আঙ্গিনায়, পুকুর পাড়ে, জঙ্গলে কিংবা রাস্তার ধারে থাকা তেঁতুল গাছ এখন আর চোখে পড়েনা। ঘরের কোণে বোতলে রাখা তেঁতুলের আচার তেমন আর খাওয়া হয়না। অথচ কতই না গুণে গুণান্বিত এই তেঁতুল ফল। গ্রামীণ উপকথা ভূত- পেতনির বাসস্থান নামে আখ্যায়িত করার অনেকে ভয়েই তেঁতুল গাছ কেটে ফেলেছে।
বিশেষ তথ্য মতে জানা গেছে, রোগ প্রতিকারে অনেক পদ্ধতিতে তেঁতুল ব্যবহার করা যায়। রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর কাজে বর্তমানে তেঁতুলের আধুনিক ব্যবহার হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার তাৎক্ষণিকভাবে উপশম হয় কাঁচা অথবা পাঁকা তেঁতুল খেলে। নিয়মিত তেঁতুল খেলে শরীরে মেদ জমাতে পারেনা। তেঁতলে টারটারিক এসিড থাকার কারণে খাবার হজমেও এটি দারুন সহায়ক। পেটের বায়ু ও হাত পা জ্বলাতে তেঁতুলের শরবত খুবই উপকারি। পেটের ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, ধুতরা ও কচুর বিষাক্ততা থেকে রক্ষা পেতে তেঁতুল ফলের শাঁসের শরবত খেলে শতভাগ সফলতা পাওয়া যায়। নিয়মিত খেলে প্যারালাইসিস আক্রান্ত অঙ্গের অনুভূতি ফিরে আসে। এছাড়াও স্কেলিটাল ফ্রুরোসিস (skeletal fluorosis) রোগের প্রকোপ হ্রাস করতেও এটি ব্যবহৃত হয়। নেত্রকোনার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, তেঁতুল গাছটি আমাদের নিকট ঔষধি গাছ হিসাবেই পরিচিত। আমাদের যখন হাঁপানি, চোখ জ্বালাপোড়া ও দাঁত ব্যাথা করতো তখন আমাদের বাবা- মা এই তেঁতুল গাছের চূর্ণ ব্যবহার করতো। মুখের ভিতরের ক্ষত সারাতে তেঁতুল পাতা সিদ্ধ মূখে নিয়ে দুই তিন দিন চার/পাঁচ বার গড়গড়া করলে আরোগ্য পাওয়া যায়। একই পানি দ্বারা শরীরের যেকোন নতুন বা পুরনো ক্ষতস্থান ধুয়ে দিলে ক্ষতস্থান দ্রুত শুকিয়ে যায়।
নেত্রকোনা জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার সরেজমিনে গিয়ে আরো জানা যায়, যদি এই ঔষুধি গুন সম্পূর্ণ গাছটিকে সুষ্ঠ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় ও চারা রোপনের মাধ্যমে টিকিয়ে না রাখা হয় তাহলে একদিন হয়তো প্রকৃতি থেকে চিরচেনা তেঁতুল গাছটি হারিয়ে যাবে। তেঁতুল গাছ সম্পর্কে জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান জানান, দেশী তেঁতুল গাছে ফলন আসতে খুব সময় লাগে, তাছাড়া সন্তোষজনক ভাবে ফলন না হওয়ায় আজ বিলুপ্তির পথে দেশীয় তেঁতুল গাছ। তবে আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বা মেলার মাধ্যমে এই দেশীয় তেঁতুল গাছের গুরুত্ব তুলে ধরে চাষিদের উৎসাহিত করে থাকি। তিনি আরো বলেন, তেতুল একটি অসাধারণ ঔষধি গাছ। প্রকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বেশি পরিমানে তেঁতুল গাছ রোপন করা দরকার। এই গাছ রোপনের জন্য আমরা জনসাধারণকে সচেতন করে আসছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ শরীফ। নির্বাহী সম্পাদক : তাসেরা তাজরীন। বার্তা সম্পাদক : মোহাম্মদ আমান উল্যা।সম্পাদক ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: এমএস প্লাজা (৩য় তলা)২৭/সি/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
তুহিন
প্রেস ২১৯/২, ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল হতে মুদ্রিত। ফোন:
+৮৮-০২-৪১০৫২৪৯৪, মোবাইল: ০১৯৭১-৮৪২৩৬৫, ০১৭১১৮৪২৩৬৫, বার্তা: ০১৭৩১-৮৫৭১৮৬
,anantabanglanews24@gmail.com
Copyright © 2024 দৈনিক অনন্ত বাংলা. All rights reserved.